Sylhet Today 24 PRINT

‘মেয়রের বাসায়’ পাখি সরবরাহ করেন তিনি!

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৮ অক্টোবর, ২০২১

সিলেট নগরের কুমারপাড়া এলাকায় বালিহাঁস বিক্রি করছেন জিতু মিয়া নামের এক ব্যক্তি।

এমন খবর পেয়ে ওই এলাকায় যান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেটের সাধারণ সম্পাদকসহ পরিবেশ কর্মীরা। এলাকায় গিয়ে ঘটনার সত্যতাও পান তারা।

খাঁচায় করে ১৬টি বালি হাঁস বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন জিতু মিয়া। প্রথমে ক্রেতা সেজে জিতু মিয়ার সাথে কথা বলেন পরিবেশ কর্মীরা। প্রতিটি হাঁস ২৫ শ' টাকা করে ১০ হাজার টাকায় বিক্রির কথা জানান জিতু।

এসময় আলাপচারিতায় জিতু মিয়া জানান, তিনি সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় নিয়মিত পাখি সরবরাহ করেন। গত শীতেও অনেকগুলো পাখি বিক্রি করেছেন মেয়রের বাসায়।

জিতুর সাথে আলাপচারিতা শুরুর আগেই র‍্যাবকে এ তথ্য জানিয়ে রেখেছিলেন পরিবেশকর্মীরা। আলাপচারিতার সময়ই ঘটনাস্থলে গিয়ে হাজির হয় র‍্যাবের একটি দল। পাখিসহ জিতু মিয়াকে ধরে নিয়ে যায় তারা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের কুমারপাড়া এলাকায় ঘটে এমন ঘটনা। সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বাসাও ওই এলাকায়।

এরআগে বৃহস্পতিবার পরিবেশকর্মীদের সাথে নিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা আরও দুটি স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও ৪টি বালিহাঁস, ৪টি বক ও একটি ময়না পাখি উদ্ধার করেন।

তবে জিতু মিয়ার কাছ থেকে পাখি কেনার অভিযোগ অস্বীকার করে বৃহস্পতিবার রাতে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি বছর দশেক আগে একবার পাখির মাংস খেয়েছিলাম। এরপর আর কোনোদিন খাইনি। চিকিৎসকের নির্দেশে আমার মাংস খাওয়াই নিষেধ। আমার বাসার কেউও পাখির মাংস খান না।

তিনি বলেন, পাখিবিক্রেতা আমার বাসার সামনে ধরা পড়ায় বাঁচার জন্য হয়তো আমার নাম বলেছে।

পাখিবিক্রেতা জিতু মিয়া সিটি মেয়রের বাসায় পাখি বিক্রির তথ্য দিয়েছেন জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, আমরা যখন জিতু মিয়ার সাথে পাখি বিক্রির সাথে কথা বলছিলাম তখন তিনি মেয়রের বাসায় নিয়মিত পাখি বিক্রি করেন বলে জানিয়েছেন।

কিম বলেন, সিলেটের নাট্য সংগঠক এনামুল মুনিরের কাছ থেকে কুমারপাড়া এলাকায় পাখি বিক্রির তথ্য পেয়ে আমরা ওই জায়গায় গিয়েছিলাম।

এরআগে বৃহস্পতিবার সকালে নগরের মিরাবাজার এলাকা থেকে আরেক বিক্রেতার কাছ থেকে এনামুল মুনির ৪টি বক উদ্ধার করেন জানিয়ে কিম বলেন, দুপুরে বন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে দক্ষিণ সুরমার খোজারখলা এলাকার একটি জলাশয়ে ওই বকগুলো উদ্ধার করতে গিয়েছিলাম। এ সময় খবর পাই দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলার একটি দোকানে পাখি বিক্রি হচ্ছে।

সাথেসাথেই বন বিভাগের কর্মকর্তারা ‌'বিসমিল্লাহ পিজিয়ন সেন্টার' নামে ওই দোকানে অভিযান চালান বলে জানান কিম।

সেখান থেকে ৪টি বাঁলিহাস ও একটি ময়না পাখি জব্দ করা হয়। যেগুলো বিক্রির জন্য দোকানে রাখা হয়েছিলো।

'বিসমিল্লাহ পিজিয়ন সেন্টার'-এর সত্ত্বাধিকারী দক্ষিণ সুরমার জৈনপুর এলাকার আমিনুল হক জুয়েল। তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী।  

পাখি বিক্রি বিষয়ে আমিনুল হক জুয়েল বলেন, আমি না বুঝেই বালিহাঁস ও ময়না বিক্রির জন্য দোকানে রেখেছিলাম। এটা আমার ভুল হয়েছে। এসব বিক্রি যে নিষিদ্ধ তা আমি জানতাম না।

এসব অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের সিলেট টাউন রেঞ্জের রেঞ্জার মো. শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণি ও পাখি বিক্রি আইনত দণ্ডনীয়। এসব বিক্রি বন্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।

তিনি বলেন, ভার্থখলার ব্যবসায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার কাছে থাকা পাখিগুলো আমরা জব্দ করে এনেছি।

র‍্যাব-৯ এর এএসপি তুইন রেজা বলেন, কুমারপাড়া থেকে বালিহাঁস বিক্রিকালে এক বিক্রেতাকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.