Sylhet Today 24 PRINT

লন্ডনে মারা গেছেন হারিছ চৌধুরী!

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১২ জানুয়ারী, ২০২২

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে মারা গেছেন দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী। যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিন মাস আগেই তিনি মারা যান।

তিন মাস আগে মারা গেলও এতোদিন এ তথ্য জানা যানা যায় নি। মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর জানান তার চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আশিক চৌধুরী।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। সে সময়ের প্রভাবশালী নেই নেতা বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালে ২১ আগস্টের গ্রেণেড হামলা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর।

মঙ্গলবার আশিক চৌধুরী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’। নিজের ছবির সাথে হারিছ চৌধুরীর একটি ছবি যুক্ত করে তিনি এই স্ট্যাটাস দেন। এরপর স্ট্যাটাসের নিচে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন লিখে কমেন্ট করতে থাকেন। অনেকে হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে আফসোসও করেন।

আশিক চৌধুরী জানান, গত বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাছি হারিছ চৌধুরী লন্ডনে করোনা আক্রান্ত হন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় ফিরেন। কয়েকদিন পর তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভও আসে। করোনার দখল সাময়িক কাটিয়ে ওঠলেও তার ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান হারিছ চৌধুরী। হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ তার মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ফোনে দেশে জানিয়েছেন বলে জানান আশিক চৌধুরী।

জানা গেছে, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে থাকতেন। তার ছেলে জনি চৌধুরী পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। আর মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ব্যারিস্টার। আগে থেকেই হারিছ চৌধুরী ব্ল্যাড ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে একবার রক্ত পরিবর্তন করে আসেন। দেশ থেকে পালানোর পর তিনি যুক্তরাজ্যে আরেকবার রক্ত পরিবর্তন করেন বলে জানা গেছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আক্রান্ত হওয়ার আগে হারিছ চৌধুরী করোনার দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। এরপরও তিনি আক্রান্ত হন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তার শরীরের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং পুরো ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে পড়ে। ফলে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও তিনি ফুসফুস জটিলতায় ভূগছিলেন।
 
জানা যায়, ২০০৭ সালে দেশে জরুরী অবস্থা জারির সপ্তাহখানেক পর স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে বেড়াতে আসেন হারিছ চৌধুরী। ওই রাতেই যৌথবাহিনী তার বাড়িতে অভিযানযান চালায়। তবে তাকে পায়নি।। এরপর কয়েক দিন সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যান বিএনপি সরকারের দাপুটে এই নীতিনির্ধারক। এরপর তিনি ওঠেন নানার বাড়ি ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে। এরপর পাকিস্তান হয়ে ইরানে তার ভাই আবদুল মুকিত চৌধুরীর কাছে পৌঁছান এমন খবরও চাউর হয়। ইরান কয়েক বছর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে পরিবারের কাছে যান। সেখান থেকে ভারতে যাতায়াত করতেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য দেখভাল করতেন বলে একাধিক সূত্র বিভিন্ন সময় নিশ্চিত করেছে।

প্রসঙ্গত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একইবছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটাবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর ৭ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হারিছ চৌধুরী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ২৮ জনের জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.