Sylhet Today 24 PRINT

শিক্ষার্থীদের ফুল ফিরিয়ে দিল পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: |  ১৭ জানুয়ারী, ২০২২

ফুল নিয়ে পুলিশকে ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন শাবির এক শিক্ষার্থী।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার দুপুরে তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

এদিকে দিনভর পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলেও উপাচার্য ভবনের সামনে এসে পুলিশ সদস্যদের দিকে ফুল হাতে এগিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। তবে পুলিশ সদস্যরা তাদের দেওয়া ফুল নেননি।

এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন- ‘পুলিশ তুমি ফুল নাও, আমার ক্যাম্পাস ছেড়ে দাও।’

পুলিশ ফুল না নেওয়ায় মাইকে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে খোলা চিঠি পাঠ করেন শিক্ষার্থীরা।

চিঠিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা না দেয়া ও ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

পুলিশকে ফুল দেয়া প্রসঙ্গে শিক্ষার্থী জোহরা আক্তার বলেন, ‘তারা আমাদের ক্যাম্পাসে অতিথি। তাই তাদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়েছি। আশা করি তারা ফুল নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমরা কোনো পুলিশ চাই না।’

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘আমরা এখানে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। ফুল গ্রহণ করা বা না করা আমাদের দায়িত্বের অংশ নয়।’

ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আমরাও এখানে ঢুকতে চাই না। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের আহ্বানেই আমরা এখানে এসেছি। শিক্ষার্থীরা যদি শান্ত থাকে আমরাও ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাব।’

সোমবার সকাল থেকে ভিসিসহ প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন চলছে সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেগবান হয়েছে। দলে দলে এসে আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বহিরাগতরা নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে এদিন দুপুরে অভিযোগ করেছেন ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘বহিরাগতদের ইন্ধনে এখন আন্দোলন চলছে। রোববার রাত থেকেই ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা প্রবেশ করেছে বলে আমার কাছে তথ্য আছে।’

তবে ভিসির এমন দাবি নাকচ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ঘটনা ধামাচাপা দিতে মিথ্যাচার করছেন উপাচার্য। ক্যাম্পাসে পুলিশ ছাড়া বহিরাগত কেউ নেই।

নিজ বাসভবনে ভিসি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বহিরাগত ঢুকে পড়েছে। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে। তাদের ইন্ধনে শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।

‘আমাদের শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো। তারা প্রশাসনের প্রতি আস্থাশীল। আজকের আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তেমন সম্পৃক্ততা নেই।’

কারও ইন্ধনে শিক্ষার্থীরা যাতে আর বিভ্রান্ত না হয়, সেদিকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘রোববারের যে ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। তাদের দাবি মেনে হল প্রভোস্টও পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের আরও যে দাবি রয়েছে, সেগুলো আমি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি।’

উপাচার্যের অভিযোগের বিষয়ে কথা হয়েছে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে।

তাদের একজন শিক্ষার্থী সৌরভ চাকমা। তিনি বলেন, ‘রোববারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে ভিসি এমন কথা বলছেন। তারা (প্রশাসন) অভিযোগ করছে, বহিরাগতরা এসে গুলি চালিয়েছে। কিন্তু সত্য হলো- পুলিশ ছাড়া কেউ গুলি চালায়নি। পুলিশের গুলিতেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। এখানে পুলিশ ছাড়া কেউ বহিরাগত নেই। পুলিশকে উপাচার্য ডেকে এনেছেন।’

ভিসিকে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘তিনি একের পর এক মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। আমরা আর এই উপাচার্যকে এক মুহূর্ত চাই না। তাকে শাবি ছাড়াতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সোমবার সকালে মুক্তমঞ্চের সমাবেশ থেকে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও থিয়েটার কর্মী শাহীন আলম বলেন, ‘আমরা উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। তাকে ক্যাম্পাস থেকে চলে যেতে হবে। আমরা রাষ্ট্রপতি বরাবর আজ চিঠি দেব। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা ক্যাম্পাস ছাড়ব না।’

শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে চাচ্ছেন না এই প্রসঙ্গে সিন্ডিকেট সদস্য জহির বিন আলম বলেন, ‘যদি তারা হল না ছাড়ে, তবে কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিন দফা দাবির আন্দোলনে ভিসির নির্দেশেই রোববার সন্ধ্যায় পুলিশ হামলা চালিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এ কারণেই প্রক্টরিয়াল বডিরও পদত্যাগের দাবি আনা হয়েছে।

বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। রোববার আন্দোলনের চতুর্থ দিনে এসে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।

রোববার বিকেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে ধাওয়া দিয়ে অবরুদ্ধ করেন। এর জেরে সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। এতে রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস।

রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেন উপাচার্য। সেই সঙ্গে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

প্রাধ্যক্ষ জাফরিনের কাছে সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা কিছু সমস্যার কথা জানান। অভিযোগ, এ বিষয়ে তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। এর প্রতিবাদে জাফরিনের পদত্যাগসহ শুরু হয় তিন দফা দাবিতে আন্দোলন।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাশেদ তালুকদারকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য জহির বিন আলম বলেন, ‘রোববারের ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে, কারা দোষী- এটা আমরা খুঁজে বের করব। বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত ছিল, হঠাৎ কেন এমন অশান্ত হলো তা বের করা হবে।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.