Sylhet Today 24 PRINT

‘আমার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই, কিছুই অবশিষ্ট রইল না’

সিলেটের হকার্স মার্কেটে আগুন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০২ মে, ২০২২

‘সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার কিছুই অবশিষ্ট রইল না। আগুনে দোকানের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’—বারবার এই কথা বলে বিলাপ করছিলেন একজন ব্যবসায়ী। পাশে দাঁড়িয়ে আরও দুজন ব্যবসায়ী তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। বিলাপকারী সিলেট নগরের লালদীঘিরপার এলাকার হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী। আগুনে তাঁর দোকান পুড়ে গেছে।

কেবল ওই ব্যবসায়ীই নন, আগুনে দোকান পুড়ে নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হওয়া অনেক ব্যবসায়ীকেই আজ সোমবার এমন বিলাপ করতে দেখা গেছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর আজ ভোর সাড়ে পাঁটটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম ভূঞা বলেন, মার্কেটে ১ হাজার ৩৫টি দোকান আছে। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫টি দোকান সম্পূর্ণ বা আংশিক পুড়ে গেছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা যায়নি।

একাধিক ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বিপণি বিতানের ৫ নম্বর গলির একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। এরপর মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মার্কেটের ভেতরে সরু গলি থাকায় ক্রমেই আগুনের পরিধি বাড়তে থাকে। মার্কেটের অসংখ্য দোকান পুড়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মেসার্স সামিয়া ক্লথ স্টোরের পরিচালক খলিলুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘রাতে সেহেরি খেয়ে ফজরের নামাজ আদায়ের পরপরই আগুন লাগার খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে এসে দেখি অন্য ব্যবসায়ীরাও হাজির হয়েছেন। নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দিকে এগিয়ে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। সব ছাই হয়ে গেছে।’ আগুনে তাঁর প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো মালামাল পুড়ে গেছে বলে তিনি দাবি করেন।

মাসুম গার্মেন্টস নামের দোকানের ব্যবসায়ী ওলিউর রহমান দাবি করেন, তাঁর সব মিলিয়ে ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া দোকানের সব হিসাব-নিকাশের কাগজপত্র পুড়ে গেছে। তবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর নগদ টাকা খুব বেশি ছিল না।

মেসার্স মুহিত গার্মেন্টের স্বত্বাধিকারী আবদুল মুহিত বলেন, ‘সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার কিছুই অবশিষ্ট রইল না। আগুনে দোকানের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’ কথা শেষ করেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় আশপাশের ব্যবসায়ীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেন। জানান, নারীদের তৈরি পোশাক তিনি পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করতেন। ঈদের জন্য বাড়তি পোশাকও কিনে এনেছিলেন। মালামাল বিক্রি করার পর টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এখন টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন, সেই চিন্তায় অস্থির তিনি।

ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, মার্কেটে যখন আগুন লাগে, তখন তিনি দোকান থেকে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে তাঁর দোকানে আগুন লাগেনি। আগুন লাগার পরপরই তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে তাৎক্ষণিক সিলেট নগরের তালতলা এলাকার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে যান। পরে তাদের খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি জানালেন, প্রথমে পানির ব্যবস্থা করতে না পারায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। পরে নদী এবং ছড়া থেকে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এর আগেই বেশ কিছু দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যেসব দোকান পুড়ে গেছে, এর বেশির ভাগ পোশাকের। এ ছাড়া জুতার দোকানও কিছু আছে।

আলকাছ মিয়া হোসিয়ারি অ্যান্ড গার্মেন্টস স্টোরের মালিক আলকাছ মিয়াকে তাঁর পুড়ে যাওয়া দোকানের সামনের অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আগুনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দোকানের মালিক তিনি। তাঁর দোকানে পুরুষ ও নারীদের তৈরি পোশাক পাইকারি ও খুচরা দরে বিক্রি করা হতো।

আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, করোনায় গত দুই বছর ব্যবসা হয়নি। তাই এবারের ঈদকে সামনে রেখে বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকার পণ্য তুলেছেন দোকানে। সাধারণত ঈদের আগের দিন বেচাকেনা ভালো হয়। সেই প্রস্তুতি ব্যবসায়ীরা নিয়েছিলেন। এর মধ্যে আগুনে অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেলেন।

আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে মার্কেটের ভেতরের গিঞ্জি দোকানপাট, সরু গলি এবং টিন-কাঠের তৈরি দোকান কাঠামোকে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, মার্কেট বানানোর সময় ভেতরে চলাচলের জন্য যে মাপের রাস্তা ছিল, তা এখন নেই। মার্কেটের ভেতরের রাস্তাটি একেবারে সরু ও অপ্রশস্ত। তাই ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নেভাতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন। এসব বিষয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.