Sylhet Today 24 PRINT

জৈন্তাপুরে বন্যায় বাড়ি-ঘর প্লাবিত, পানিবন্দি হাজারো মানুষ

শোয়েব উদ্দিন, জৈন্তাপুর: |  ১৭ মে, ২০২২

অব্যাহত ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলায় এখনো বন্যার পানি বেড়েই চলছে।

সারি, করিচ, কাপনা, ও বড়গাং নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার ৬ ইউনিয়নে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে মানুষের ঘর বাড়িসহ ভেসে গেছে হাজারও মৎস্যচাষির স্বপ্ন। এছাড়া নদী ও পাহাড়ি ছড়ায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ঘাট, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে হুমকির মুখে পড়েছে অনেকেই। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানিতে ভেজা বোরো ধান বাসায় ধানের চারা গজিয়েছে এ ছাড়া আমন ধানের বীজতলা, বিভিন্ন সবজি ফসল ও শতাধিক মৎস্য খামার পানিতে তলিয়ে গেছে।

গত বুধবার (১১ মে) থেকে জৈন্তাপুর উপজেলায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা শুরু হয়। বিগত দিনে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও রবিবার (১৫ মে) গভীর রাত থেকে নদীগুলোর পানি পূনরায় বৃদ্ধি পায়। সোমবার ভোর থেকে সারি নদীর পানি বিপদসীমার .৪৪ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও মঙ্গরবার সারি নদীর পানি বিপদসীমার .১৮ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে করিচ ও কাপনা নদীর পানি অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, মসজিদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও তারা পড়েছে মহাবিপদে। বন্যায় কারো ঘরে পানি, কারো দুয়ারে। বন্যায় কবলিত এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে ও অন্যের বাড়িতে। কেউ টং পেতে পরিবার নিয়ে নানা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। অনেকের রাত দিন কাটাতে হচ্ছে নৌকায়। পানি কমার অপেক্ষায় বন্যায় কবলিত মানুষ। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষগুলোর কষ্টের শেষ নেই। তিন বেলা খেতেও পারছেন না অনেকেই।

সরেজমিনে বন্যা কবলিত এলাকা উপজেলা নিজপাট ইউনিয়নের মেঘলী, বন্দরহাটি, লামাপাড়া, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, মজুমদার পাড়া, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, তিলকৈপাড়া, বড়খেল, ফুলবাড়ী, ডিবিরহাওর, ঘিলাতৈল, হেলিরাই। জৈন্তাপুর ইউনিয়নের মুক্তাপুর, বিরাইমারা, বিরাইমারা হাওর, লামনীগ্রাম, কাটাখাল, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১ নম্বর লক্ষীপুর, ২ নম্বর লক্ষীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, নলজুরী হাওর। ৩ নম্বর চারিকাটা ইউনিয়নের বালিদাঁড়া, লালাখাল, রামপ্রসাদ, থুবাং, বাউরভাগ উত্তর, বাউরভাগ দক্ষিণ, পুঞ্জী ৫ নম্বর ফতেপুর ইউনিয়নের হেমু ভাটপাড়া, মাঝপাড়া, দত্তপাড়া, বালিপাড়া, নয়াগ্রাম, নয়াগ্রাম দক্ষিন, ভেলোপাড়া, ৬ নম্বর চিকনাগুল ইউনিয়নের কান্দী ৪ নম্বর দরবস্ত ইউনিয়নের মহাইল, মুটগুঞ্জা, সেনগ্রাম, গর্দনা, ফরফরা, শুকইনপুর, রনিফৌদ, সাতারখাইসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তাদের চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। বন্যায় কবলিত যারা দিনমজুর তাদের কষ্টের শেষ নেই। তিন বেলা তিন মুঠো খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওইসব পরিবারের। অনেকেই রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বন্যায় প্লাবিত হওয়া এলাকার শিশু-কিশোরদের নিয়েও অনেক কষ্টে রয়েছে তাদের পরিবার। সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বন্যায় কবলিত অনেক এলাকার মানুষ। চিকিৎসাসেবা থেকেও তারা রয়েছে বঞ্চিত।

হেমু ভাটপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন বলেনন, তাদের এলাকাসহ আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের ঘর বাড়িতে পানি। মানুষ মাচা, টং ও নৌকায় দিন কাটাচ্ছে। এতে রান্না-বান্না সহ নানা সমস্যায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা। বৃষ্টি আসলে পানিতে ভিজতে হয়। গরু-ছাগল সহ গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে ও রয়েছে তারা মহাবিপদে।

আবহাওয়ার একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ নয় ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টিপাত কমলে জৈন্তাপুরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। তা না হলে এই বন্যা ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশংকা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার সূত্রে জানা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলায় এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত ৪০ একর হালিতলা পানির নিচে নিমজ্জিত এবং প্রায় ১শ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এব্যাপারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্নয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, সারি নদীর পানি বিপদসীমার উপরদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ে বৃষ্টি থেমে গেলে পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম বলেছেন, আমরা ইতোপূর্বে পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। একই সাথে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় সার্বক্ষণিক কাজ করতে প্রস্তুত আছি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.