Sylhet Today 24 PRINT

নগরের আশ্রয়কেন্দ্রে ভিড় করছেন পানিবন্দী মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৮ মে, ২০২২

পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সিলেট নগরসহ জেলার পাঁচটি উপজেলা। ফসলি জমি, বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট ডুবেছে পানির নিচে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে প্লাবিত এলাকার মানুষজন ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে।

মঙ্গলবার (১৭ মে) সুরমা নদীর পানি উপচে নগরীতে প্রবেশ করায় বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যায়। বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অনেক অফিসে পানি ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।

সিলেট নগরীর প্লাবিত এলাকাগুলো হলো, শাহজালাল উপশহর, মাছিমপুর, লালাদিঘির পাড়, কলাপাড়া, লামাপাড়া, ঘাসিটুলা, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা, মাছিমপুর, পাঠানটুলা, লন্ডনি রোড, মেজরটিলা, মোল্লাপাড়া, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, মোমিনখলা।

এদিকে আকস্মিক বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দারা। এ অবস্থায় তাদের জন্য এগিয়ে আসে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। পানিবন্দি মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশেনের সাত ওয়ার্ডে খোলা হয় ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র।

সিলেট নগরের বন্যা দুর্গতদের জন্য খোলা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হল- ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কিশোরী মোহন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরাবাজার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চালিবন্দর রামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়, চালিবন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল হামিদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাছিমপুর, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বোরহান উদ্দিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উমরশাহ তেরোরতন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মির্জাজাঙ্গাল স্কুল, মনিপুরী রাজবাড়ি আশ্রয় কেন্দ্র ও মাছুদিঘীর পাড়, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ঘাসিটুলা স্কুল, ইউসেফ স্কুল, কানিশাইল স্কুল, জালালাবাদ স্কুল, বেতের বাজার কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশের ৪তলা ভবন, ২৬ নং ওয়ার্ডে রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে হবিনন্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সিলেট।

এদিকে আশ্রয়কেন্দ্র খেলার খবরে ভিড় করছে পানিবন্দী মানুষ। পরিবার-পরিজন ও মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা-পয়সা নিয়ে তারা হাজির হচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

সিলেট নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ডের মিরাবাজার কিশোরীমোহন বালক উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে কথা হয় রহিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে সাময়িকভাবে আশ্রয় নিয়েছি ঠিকই কিন্তু মন পড়ে আছে আমার সেই ছোট্ট ঘরে। যদি ঘরে হাঁটুসমান পানিও থাকত, তাহলে ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতাম না।

মির্জাজাঙ্গাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আবুল হোসেন নামে একজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, নগরীর মাছুদিঘির পাড়ে আমার বাসা। বৃষ্টি ছাড়াই যেভাবে পানি ঘরে ঢুকে পড়েছিল, তাতে বউ-বাচ্চা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। পরে আশ্রয়কেন্দ্রের খবর পেয়ে পরিবার নিয়ে এখানে আসছি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তু বলেন, আমাদের সিটি করপোরেশন থেকে আপাতত এই আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ২০০৪ সালের পর নদীর পানি কখনো এতোটা বাড়েনি। ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। আর আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছেন, ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে।

অন্যদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাইয়িদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তাছাড়াও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বৃষ্টিও কমছে না। তাই পাহাড়ি ঢল নামছে এবং আমাদের দেশেও পানি বাড়ছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.