Sylhet Today 24 PRINT

নবীগঞ্জে ৭ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

সিলেটটুডে ডেস্ক: |  ২২ জুন, ২০২২

সিলেট ও সুনামগঞ্জের পর এবার বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে নবীগঞ্জে। প্রতি ঘণ্টায় পানি বাড়ছে। উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে কুশিয়ারা, খোয়াই ও কালনীসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়ারা ডাইক কসবা গ্রামের কাছে পানি প্রবেশ করছে।

আতঙ্কে রয়েছে নবীগঞ্জসহ সমগ্র হবিগঞ্জ জেলার মানুষ। নবীগঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু স্থানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড ও বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্লান্ট।

জানা যায়, কয়েক দিন টানা উজানের পাহাড়ি ঢল এবং মুষলধারায় বৃষ্টির ফলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করছে। উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বান্দেরবাজার ও কসবা সড়ক ডুবে দ্রুত গতিতে পানি ঢুকছে কসবা গ্রাম ও বাজারসহ কয়েকটি গ্রামে। ইতিমধ্যে দুটি ইউনিয়নকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

বাঁধ উপচে গ্রামে প্রবেশ করছে বন্যার পানি। দীঘলবাক ইউনিয়নের রাধাপুর, ফাদুল্লাহ, দুর্গাপুর, মথুরাপুর, হোসেনপুর, মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর, আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর, পারকুল, উমরপুর, দীঘর ব্রাহ্মণগ্রাম, করগাঁও ইউনিয়নের শেরপুর, পাঞ্জারাই, গুমগুমিয়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল, বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের সোনাপুর, চরগাঁওসহ সবকয়টি গ্রাম, ইনাতগঞ্জ দেবপাড়া ও বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে।

পানি দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। অসহায় মানুষজন গবাদিপশু ও শিশু-সন্তান নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। মালামাল নিরাপদ স্থানে নিচ্ছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, দুর্গাপুর ও দীঘলবাক গ্রামের সড়কসহ ১৫-২০টি সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বান্দেরবাজার-কসবা সড়ক ডুবে দ্রুত গতিতে পানি প্রবেশ করছে বিভিন্ন গ্রামে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ইনাতগঞ্জে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের অন্যতম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা ও পারকুলে অবস্থিত কুশিয়ারা নদীঘেঁষা বিবিয়ানার ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। বর্তমানে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২-৩ হাত নিচে পানি রয়েছে।

ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোমান হোসেন বলেন, বন্যার পানি ইনাতগঞ্জের প্রতিটি গ্রামে প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। তিনি বলেন, যে হারে পানি প্রবেশ করছে এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে পানি প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।

করগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্মলেন্দু দাশ রানা জানান, তার ইউনিয়নের সব কয়টি গ্রামে মঙ্গলবার রাতে বানের পানি প্রবেশ করেছে।

শেভরন বাংলাদেশের মুখপাত্র শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র সুরক্ষিত রাখতে এবং যাতে ভেতরে পানি প্রবেশ করতে না পারে, এ জন্য আমাদের টিম কাজ করছে। আশা করছি, গ্যাস ক্ষেত্রের ভেতরে পানি প্রবেশ করবে না।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা বন্যার পানি প্রবেশ রোধ করার চেষ্টা করছি।

নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছি। উজানের পানি বন্ধ না হলে আমাদের উপজেলার অবস্থা আরও ভয়াবহের দিকে ধাবিত হবে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন বলেন, উজানের ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে উপজেলার শতাধিক গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। নৌকা প্রস্তুত রয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছি। সময় যত যাচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.