Sylhet Today 24 PRINT

‘পুলিশ’র খানি পাইয়া পেট ভরিয়া খাইলাম আইজ ২ দিনে’

শিপার আহমেদ, বিয়ানীবাজার |  ২৭ জুন, ২০২২

‘আমি জানতাম পুলিশ’র কাম চোর-ডাকাইত ধরা না এখন দেখি তারা আমরারে খানি দিরা ত্রাণ ও দিরা। ওউ লাগাইয়া ২ বার আমরারে খানি দিলা পুলিশ হকলে। পয়লা বার আমি নৌকায় পুলিশ আওয়া দেখিয়া ডরাইছি। মনো করছি কারে ধরিয়া নিতা করি আইছন। পরে নৌকা কাছে আওয়ার পরে দেখি নৌকার মাঝে বড় ডেগ আর চাউলর বস্তা। আমার ভুল ভাঙ্গিল পুলিশর কাম লইয়া। পুলিশ হকলর খানি পাইয়া পেট ভরিয়া খাইলাম আইজ ২ দিনে। আমরা যে স্কুলও উঠছি ইনো পানি উঠি গেছে। সব সময় রান্ধা যায় না এর লাগি পেট ভরি খাওয়াও যায় না। পুলিশ হকলর ব্যবহারে আমার দিল ভরি গেছে। ওসি এ আমারে মা ডাকছইন। বাক্কা সময় আমার লগে মাতছইন জিকাইছইন আমার পরিবারও কে কে আছই কে কিতা করইন। কিলা চলিয়ার পানির মাঝে। খানি পাইয়ার নি আমিও তানরে আমার নিজর পুয়ার লাকান সবতা কইছি। আমারেও ওসি এ কইছন যে সময় যেতা দরকার তানরে ফোন করতাম। তান তান ব্যবহারে আমি সন্তুষ্ট। বাড়িত পানি উঠছে আর লাগি স্কুলও পরিবারর লগে আইছি এখন স্কুলও পানি উঠি গেছে। পানির মাঝে ঢর করে সাপ-কোপে কামড় দিব। বাছমু কি মরমু জানি না’

কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের বিয়ানীবাজার মুড়িয়া ইউনিয়নের ঘুঙ্গাদিয়া এলাকার বাসিন্দা কমলারুন বেগম (৭০)। বাড়ি ঘর পানিতে তলিয়ে যাবার কারণে উঠেছেন ঘুঙ্গাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে। এই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে বন্যার পানি। এখানে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো অনেক কষ্ট সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গতকাল রোববার (২৬ জুন) দুপুরে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এই আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবারও ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। বিয়ানীবাজার থানার ওসি হিল্লোল রায়ের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওই আশ্রয় কেন্দ্রে খাবার পৌঁছে দেন। এই খাবার পেয়ে অনেকটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন কমলারুন। বলেন তার মনের কথা।

সরেজমিনে উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের ঘুঙ্গাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষের ভিতরে বন্যার পানি ডুকে পড়েছে। বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো বিদ্যালয়ের বেঞ্চর উপর বসবাস করছেন। রান্না-ভাড়া সবই হচ্ছে বেঞ্চর উপর। বিদ্যালয়ের যাবার একমাত্র সংযোগ সড়কে ৬-৭ ফুট পানি উঠে যাবার কারণে এখানে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয় অনেকটা কষ্ট সাধ্য।
 
আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে আসা যুবক সমছুল হক (৩০) বলেন, ‘আমার ঘরও বুক সমান পানি। কোন অবস্থায় ঘরও থাকা যার না। আর কোন জাগা না পাইয়া আইছলাম আশ্রয় কেন্দ্রত। ইনো আইয়া দেখি এক সমান অবস্থা। ইনোও পানি উঠি গেছে আমরা কই যাইতাম। স্কুলর চাইর দিকে হাওর সব সময় সাপ দেখা যায় ইনো। বড় ঢ়র মাঝে আছি বউ-বাইচ্চা লইয়া। কোন সময় সাপে কামড় মারে। ইনো ছোট ছোট বাইচ্ছাইন আছইন কোন সময় কার বাইচ্ছা পানিত পড়বো। আমরারে ইনো থাকি হরানির ব্যবস্থা না করলে কোন সময় কোন অঘটন ঘটবো আল্লায় জানইন।’

বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, এই আশ্রয় কেন্দ্রে পানি উঠে গেছে। আমরা রোববার ওই আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবারও ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেছি। এই আশ্রয় কেন্দ্রে নৌকা ছাড়া পৌঁছানো যায় না। বিদ্যালয়ের সংযোগ সড়কে কয়েক ফুট। আমরা প্রায় প্রতিদিন বিয়ানীবাজার উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন স্যারের নির্দেশনায় রান্না করা খাবারও ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। বিয়ানীবাজারের বন্যা কবলিত কোন লোক অনাহারে থাকবে না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.