Sylhet Today 24 PRINT

নানা শ্বশুর বাড়ি থেকে কমলগঞ্জের সাবেক ছাত্রলীগ নেতার লাশ উদ্ধার

লন্ডন যাওয়া হলো না সাইফের

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি |  ২৮ জুন, ২০২২

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাতার প্রবাসী সাইফ বিন করিম মায়ের পছন্দের কনেকে বিয়ে করে সংসার বেঁধে ছিলেন এক বছর আগে। স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটের ওসমানীনগরের গলমুকাপন গ্রামের নানা শ্বশুরের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই রোববার রাতে সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতার লাশ উদ্ধার করা হয়।

আগামী সপ্তাহে স্ত্রীর সঙ্গে তার লন্ডন যাবার কথা ছিলো। তার আগেই লাশ হলেন। নিহত সাইফ কমলগঞ্জ পৌর এলাকার কুমড়াকাপন গ্রামের ফজলুল করিম বাবুলের ছেলে। গত রোববার রাতে নানা শ্বশুরের বাড়ি থেকে সাইফের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নিহত সাইফ বিন করিমের নামাজে জানাযা স্থানীয় সফাত আলী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে নিজ পারিবারীক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

কমলগঞ্জের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফের পরিবারের সদস্যরা জানান, কিছুদিন আগে স্ত্রী তাছমিনাকে সঙ্গে নিয়ে নানা শ্বশুর মুক্তার মিয়ার সিলেটের উসমানীনগরের গলমুকাপন গ্রামে বেড়াতে যান সাইফ। গত রোববার রাতে তার মৃত্যু সংবাদ পায় তার পরিবার। তাছমিনার এক মামা টেলিফোনে সাইফের বাবাকে জানান, সাইফ বসতঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে বিছানার চাদর দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে ছুটে যান সাইফের বাবাসহ স্বজনরা। তার আগেই লাশ নামিয়ে ফেলা হয়। তারা গিয়ে দেখেন নিথর দেহ খাটের মধ্যে রয়েছে। সাইফের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন এবং পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। খবর পেয়ে রোববার রাতেই লাশ উদ্ধার করে উসমানীনগর থানা পুলিশ।

নিকাহ রেজিস্টার অনুযায়ী তাছমিনা ছিলেন তালাকপ্রাপ্ত। তার বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার নবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চইতপুর গ্রামে। কিন্তু এ নামে কোনো গ্রাম নেই ওই ইউনিয়নে। তবে চৌশতপুর নামে ওই ইউনিয়নে গ্রাম রয়েছে।
 
জানা গেছে, সাইফের নানা বাড়িও ওসমানীনগরে। তাছমিনার মা রুনা হলেন সাইফের মা শাহানারা করিমের বান্ধবী। তাছমিনার প্রথম সংসার ভেঙে যাবার পর ছেলে সাইফের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। পূর্ব পরিচিত থাকায় বিয়ের সেই প্রস্তাব সহজে লুপে নেন তাছমিনার মা রুনা। বিয়ের কথা বার্তা যখন চলে তখন সাইফ বিন করিম ছিলো কাতার, আর তাছমিনা আহমেদ ছিলো লন্ডনে। কথাবার্তা চুড়ান্ত হলে সাইফকে দেখতে লন্ডন থেকে কাতার আসেন তাছমিনা। পরে কাতারেই তাদের বাগদান (এনগেজমেন্ট) সম্পন্ন হয়। গত বছরের এপ্রিলে সাইফ দেশে আসলে একই বছরের ১৩ জুন তাছমিনা আহমেদ এর সাথে ১৫ লাখ টাকায় দেন মোহরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় সাইফ। বিয়ে সম্পন্ন হয় তাছমিনার নানা মুক্তার মিয়ার নিজ বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগরের গলমুকাপন গ্রামে।

সাইফ বিন করিম এর মা শাহানারা করিম গত রোববার বিকালে ছেলে সাইফের সাথে শেষ কথা বলেন। তখন সাইফ তাকে বলে- আম্মু আমি ঘুমাচ্ছি। এ কথা বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন তিনি।

সাইফের মৃত্যুর সংবাদ রোববার রাতেই তার বাড়িতে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্য এবং স্বজন প্রতিবেশীদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। সদা হাসোজ্জল টকবগে যুবকের এ মৃত্যু সহজে কেউ মেনে নিতে পারছেন না। তার বন্ধু ও সহপাঠীরা জানান, আগামী সপ্তাহে লন্ডন যাবার কথা ছিলো সাইফের। সে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে রোববার রাতেই ওসমানীনগরের গলমুকাপন থেকে নিহত সাইফের মরহেদ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম, এ, জি, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় ওসমানীনগর থানা পুলিশ। সাইফের পরিবারের সদস্যরা জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর থেকে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে তার স্ত্রী তাছমিনার পরিবার। গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নিহত সাইফ বিন করিমের নামাজে জানাযা স্থানীয় সফাত আলী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে নিজ পারিবারীক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহেদুল আলম বলেন, সাইফ বিন করিম ছিলেন ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। জীবনের তাগিদে সে কাতার চলে যায়। কিছুদিন আগে দেশে আসে। সে আত্মহত্যা করতে পারে না। এটি পরিকল্পিত একটা হত্যাকান্ড। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.