Sylhet Today 24 PRINT

গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে বানভাসিরা

তাহিরপুর প্রতিনিধি  |  ০১ জুলাই, ২০২২

গবাদিপশু নিয়ে এখন মহা বিপদে আছে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে কৃষক। বন্যার পানিতে ঘর তলিয়ে যাওয়ার পর বহু কষ্টে আশ্রয় কেন্দ্র উঠেছেন তারা। প্রাণে বেঁচে গেলেও বন্যা তাকে নিয়ে যাচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।

পানিতে খড় নষ্ট হয়ে গেছে, কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন খাবার ও চিকিৎসা না পেলে নিজের সন্তানের মত লালন পালন করা গরুগুলোকে বিক্রি করতে হবে।
 
গত ১০দিন কোনো রকমে চলতে পারলেও এখন গরুর খাবার সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানান আজিজ মিয়া। সরজমিনে বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় তার সাথে। তার রয়েছে ৫টি গরু।

সুনামগঞ্জে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের কানামইয়া ও হানিয়া কল্মা হাওর পাড়ের দোমাল গ্রামে বাসিন্দা তিনি। বন্যায় পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।

অবলা প্রাণীগুলোর জন্য মমতা ঝরে পড়ে কণ্ঠে তার বলেন, খাবারের অভাবে গরুগুলো দূর্বল হয়ে পরেছে। এর মধ্যে পানিবাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসা করাতে পারিনি। উপজেলা পশু হাসপাতাল থেকে কোন চিকিৎসক ও আসেনি। কোন পরামর্শও পাইনি বন্যায় আমাদের কি করা প্রয়োজন।

এখন যে সমস্যা হচ্ছে তা মরার উপর খাড়ার ঘা। গরু বাঁচাতে না পারলে পরিবার নিয়ে টিকে থাকাটাও কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি,সে উদ্বেগ তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

আজিজের মতো আশ্রয় নেওয়া কাজল বেগম(৩৪)অবস্থাও একই রকম। তিনি বলেন, খাইবার নাই, ঘর দরজা সবতা পানিতে চলে গেছে। কোন উপায় না পাইয়া আইসি গরু লইয়া এই আশ্রয় কেন্দ্রে। বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।

এমন সমস্যা শুধু আজিজ মিয়া কিংবা কাজল বেগমের নয়। আশ্রয় কেন্দ্র আশ্রয় নেয় মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের রিন্টো সরকারসহ অর্ধশতাধিক কৃষক পরিবারের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার টাংগুয়ার হাওর, মাটিয়ান,শনিসহ বিভিন্ন হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের বন্যায় সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে হাওর পাড়ের কৃষক পরিবারগুলোর। তারা পরিবার পরিজন ও গরু,ছাগল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উচু বাড়ি ঘর ও সেতুতে। শামিম মিয়াসহ স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন,বন্যায় গরু-ছাগল,হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রায় সবাই। কোনো রকমে আশ্রয় কেন্দ্রে ও কিছু মানুষ নিজ বাড়িতে রেখে কোনোভাবে এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। টাকা-পয়সাও নাই যে হুট করে খাবার আনতে পারছে না।

তাদের ভাষ্য, এই মুহূর্তে গরুর জন্য খড় জোগাড় করাটা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। কারণ,সব খড়ের গাদাই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।

দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ ও উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া জানান,বন্যায় মানুষজন কোন রখমে জীবন বাঁচাতে পারলেও কৃষক পরিবারের গৃহপালিত পশু পাখিদের প্রযাপ্ত খাবার,চিকিৎসা ও নিরাপদ আশ্রয় না পাওয়ায় পশু গুলো দুর্বল ও রোগা আক্তান্ত হয়ে পড়েছে। চরম দূরাবস্থায় জীবন জাপন করতে হচ্ছে তাদের।

উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্দ হাবিবুর রহমান জানান,আমাদের পক্ষ থেকে বন্যায় আক্রান্ত খামারী ও কৃষক পরিবারের গৃহপালিত পশু পাখিদের চিকিৎসা দেয়া সহ বিভিন্ন পরার্মশ দিচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান কবির জানান,পানি এখন কমতে শুরু করেছে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক বিষয়ে সবোচ্ছ সহায়তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বন্যায় ক্ষতিহগ্রস্থ পরিবারগুলোকে। গৃহপালিত পশুর খাবার ও চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সর্বোচ্ছ চেষ্টা করব।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুন সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান,প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্র হাওর পাড়ের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে। নিয়েছেন তাদের গৃহপালিত পশু নিয়েও অনেকেই। আমি আমার সাধ্যমত সহসয়তা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেয়া উপহার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছে দিচ্ছি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.