Sylhet Today 24 PRINT

‘পানি কমলে ঘর ভাঙ্গিয়া পড়ি যাইবো, পরিবার লাইয়া কই যাইতাম’

শিপার আহমেদ, বিয়ানীবাজার  |  ০৫ জুলাই, ২০২২

‘সবার ঘর ভাইলেও আমার ঘরও এখনো কমর পানি। পানি কমার লগে লগে আমার ঘর ভাঙ্গিয়া পড়ি যাইবো, ঘরর নিছর সব মাটি ধইয়া নিছে গি। পানি কমার বাদে ই ঘরও থাকা যাইত না । আমি পরিবার লাইয়া কই যাইতাম। চিন্তায় কিচ্চু ভালা লাগের না। তিন পুয়া রুজগারি আছলা এখন তারাও বেকামা ওই গেছন। ইবার’র পানি আমারে রাস্তাত নামাই দিব। এক টেখাও নাই হাতও এলাকার মানুষে ত্রাণ দেওয়ায় খাইয়া বাছিয়া আছি।'

সোমবার সরেজমিনে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কুড়ার বাজার ইউনিয়নের খশির চাতল পার এলাকার বাসিন্দা সইজ্জাদ আলী (৭৫) এর বাড়িতে গেলে এমনই কান্না বিজরিত কন্ঠে নিজের ঘরের কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'পানি নামার বাদে ঘর টিক করইতাম না পরিবার লাইয়া খাইয়া বাচতাম জানি না। প্রত্যক দিন আইয়া আমার মায়ার বাড়ি খান দেখি। বাড়ি’র ই অবস্থা দেখিয়া চকুর পানি দরিয়া রাখতাম পারি না। দিনও ৫-৬ বার বুক পানি মারিয়া আইয়া বাড়ি খান দেখি টিন-টান আছে নি, না পানি এ ভাসাইয়া লইয়া গেছে গি। কত আরামে আমার বাড়িত আছলাম এখন থাকিয়ার পরর বাড়ি। জান বাচানির লাগি গাউ’র এক চাচা’র ঘরও ভাইর বাড়ি উঠছি পরিবার লইয়া। নিজর ঘর-বাড়ি ছাড়া রাইত ঘুম উ লাগে না। ঘরর মাল পত্র এখনো সবতা পানিত ভাইয়া ফিরের। কিচ্চু বাচাইতাম পারছি না। শখ করি গতবার ফ্রিজ লইছলাম ফ্রিজর ভিতরে পানি হামাইয়া নষ্ট ওই গেছে। এখান বেট (বিছানা) কোনমতে মাতাত করি লইয়া গেছলাম আর কিচ্চু নিতাম পারছি না সবতা ঘরর ভিতরে রইছে। আমি জীবনে ইলান বিপদও পড়ছি না ইবার যেলা বিপদও আছি।’   

৮ সদস্যর পরিবার নিয়ে দিন ভালো কাটছিল তার কিন্তু বন্যার কারণে সব কিছু হারিয়ে তিনি এখন নি:স্ব। আকুতি জানান নিজের ভিটায় না থাকতে পারার।

বিয়ানীবাজার উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও খশির চাতল পার এলাকার ৮০ ভাগ বাড়ি এখনো পারি নিচে। গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে এখনো বন্যার পানি না নামায় নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এই এলাকার বাসিন্দাদের।

কথা হয় একই গ্রামের আয়ফলা বেগম (৬০) এর সাথে। তিনি বলেন, ‘পয়লা পানি আওয়ার সময় আমার ঘরও কমর পানি আছিল। এখনো আটু পানি আছে। পরিবার লইয়া আশ্রয় কেন্দ্রত আছি। দিনও বাড়ি থাকি রাইত আশ্রয় কেন্দ্র যাই গি। ঘরর অবস্থা নাই পানি এ সবতা নষ্ট করি দিছে। দিনও ঘরও আইলে কান্দন আয় আমার। এখন পানি আছে এর লাগি ঘর খাড়া আছে। পানি হরি গেলে গি ঘর পড়ি যাইবো। ইবার খেত করিয়া কিছু ধান পাইছলাম আমরা পানি ডুবিয়া সব নষ্ট ওই গেছে। ১০ জন ওর পরিবারও আমার জামাই একমাত্র রুজগারি। তাইনও বেকামা এখন। রুজওর কাম করতা এখন রুজর কামও নাই। কিতা যে সামনর দিনও আমরার কপালো আছে জানি না বাবা। ইতা চিন্তা করলে চকুর পানি আটকাইতাম পারি না।’

নৌকা নিয়ে এগোতে নিজ ঘর থেকে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করলে একই গ্রামের হাফছা বেগম (৫০)। তিনি বলেন, ‘আমার ঘর থাকি পানি নামছে আইজ ৩ দিন। পানি নামার বাদে দেখি ঘরর সব মাঠি দইয়া নিছে গি। ঘরও আটু (হাটু) পেক(কাদা)। ই ঘর এখন আর থাকা যাইত নায়। পয়েলা ঘরও মাঠি ভরানি লাগবো। পানি’র ঢেউয়ে টিন বাজরা থাকি খুলি খুলি গেছে গি। ইতা টিক করানিত গেলে উ ৩০-৪০ হাজার টেখা লাগবো। অত টেখা কই পাইতাম। কে দিব ওত টেখা। হুনিয়ার সরকার থাকি ঘর টিক করি দিবা’র লাগি টেখা দিবা। আইড়ি কার্ড আর আমার ফটো নিছইন। জানি না পাইমু কি না’।

কুড়ার বাজার ইউনিয়নের ১০ নং ওয়ার্ডের সদস্য ও একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালিক বলেন, আমাদের ইউনিয়নের মধ্যে আমার ওয়ার্ডের ৮০ ভাগ মানুষ এখনো পানি বন্দি। আমার ওয়ার্ডে কিছুটা নিম্নাঞ্চল তাই এখনো বন্যার পানি নামে নি। আমার এলাকার মানুষের দু:খ দুর্দশার শেষ নেই আমি সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা করছি।  

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.