Sylhet Today 24 PRINT

ফেঞ্চুগঞ্জে বন্যার পানি কমছে ধীরে

রুমেল আহসান, ফেঞ্চুগঞ্জ |  ০৫ জুলাই, ২০২২

‘১৮ দিন ধরি ঘরবাড়ি ছাড়িয়া এই স্কুলে আইয়া থাকি। না পারি শান্তিতে থাকতে, না পারি শান্তিতে খাইতে। নিজের ঘরে না খাইয়াও ভালা থাকা যায়। বন্যায় আমরারে ঘরবাড়ি ছাড়া করলো। আর কতদিন যে ঘরের বাইরে থাকমু, আল্লাহ কইতা পারবা। আমার ফুয়ায় বাড়িত গিয়া দেখিয়া আইছে, পানিয়ে সব সাইটের টিন ভাঙিয়া নিছে গিয়া। ঘরটাও বন্যায় ভাঙিয়া গেলো গিয়া।’

এভাবে আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ফরিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা জমিলা বেগম(৫৬)। ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের রেল কলোনীতে তার বসত ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে গত ১৪ জুন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেন জমিলা বেগম।

এদিকে, ফেঞ্চুগঞ্জে বন্যার পানি কমছে ধীরে ধীরে। পানি সরে যাওয়ার পর বন্যার তান্ডবের চিহ্ন একে একে বেরিয়ে আসছে। রাস্তা, বসতভিটার ক্ষত বেরিয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে থাকা জিনিসপত্রের পচন ধরায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। একালাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পানিবন্দী মানুষেরা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

পানি একটু একটু করে কমতে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় অনেক বানভাসি পরিবার বাড়ি ফিরতে পারছে না। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ তৎপরতা কম থাকায় বন্যা কবলিত মানুষ ভয়াবহ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। পানিবন্দী দশা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা বন্যা কবলিত মানুষের চোখে-মুখে বাড়ি ফেরার আকুতি থাকলেও বাড়ি ফিরতে পারছে না।

চন্ডী প্রসাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা করিম উদ্দিন বলেন, নিজের ঘরে অনাহারে থাকলেও ভালো। এ মানবেতর জীবন আর ভালো লাগছে না। না পারছি নিজের চাহিদা মতো কোনো খাবার খেতে, না পারছি ভালোমতে ঘুমাতে।

সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইলাশপুর এলাকায় সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক দিয়ে ট্রাক-বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় স্থানীয় পুকুর ও বিলের পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবল স্রোতের গতিতে নামছে। সে কারণে সড়কে ভাঙন ও বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।

অটোরিকশা (সিএনজি) চালক আবুল হোসেন বলেন, উত্তর কুশিয়ারা ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মুখে বন্যার পানিতে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায়। এক সপ্তাহ ছোট কোনো যানবাহন সেখানে চলাচল করতে পারেনি। এখন পানি একটু কমায় সিএনজি সহ ছোট-বড় সকল যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু সড়কের একপাশে ভাঙন ও বড় গর্ত থাকায় গাড়ি উল্টে যেতে পারে।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীমা শারমিন বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ৬২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। ৪ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পানিবন্দী মানুষের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে ও সবসময় মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে রান্না করা খাবার বিতরণ করা অব্যাহত রয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.