Sylhet Today 24 PRINT

সিলেট শহরে দিনে ৬ ঘণ্টা, গ্রামে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৬ জুলাই, ২০২২

দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না পেয়ে মঙ্গলবার রাতে সড়ক অবরোধ করেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেতলি এলাকার বাসিন্দারা।

এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া স্থানীয় যুবক সাজ্জাদ আহমদ জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ গিয়েছিল। টানা আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকার পর সড়ক অবরোধে নামেন তারা। বিক্ষোভ চলাকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

দুদিন ধরেই ভ্যাপসা গরম সিলেটে। মঙ্গলবার তা আরও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে দিনভর ছিল বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা। রাতে লোডশেডিং আরও বাড়ে। রাতে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। গরম আর লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় গ্রাহকদের। সেই সঙ্গে দীর্ঘ বন্যার দুর্ভোগ তো রয়েছেই।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় অর্ধেক সরবরাহও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। রাতে ও গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। ফলে এ রকম সময়ে লোডশেডিংও বাড়ে।

বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে সিলেট নগর ও গ্রামাঞ্চলের অন্তত ১০ জন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, নগরে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা ও গ্রামে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বুরুঙ্গা এলাকার সুমন দেব বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ ছিল না। একবার গেলে দীর্ঘক্ষণ পর আবার আসার কিছুক্ষণই পর পরই চলে যায়। আর রাতে তো বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎহীন ছিল।’

কদিন ধরেই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

দিনে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে বলে জানান নগরের টিলাগড় এলাকার গৃহিণী রুমানা আক্তার। তিনি বলেন, ‘তীব্র গরমের সময়, ঘুমানো বা খাওয়ার সময়- এ রকম সময়েই বিদ্যুৎ চলে যায়।’

চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ার কথা জানিয়ে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মহাব্যবস্থাপক সঞ্জীব কুমার রায় বলেন, ‘চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। বিশেষত পিক আওয়ারে সরবরাহ সবচেয়ে কম মিলছে।’

তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমাদের চাহিদা ছিল ৪২ মেগাওয়াট। পেয়েছি মাত্র ২০ মেগাওয়াট। ফলে লোডশেডিং বেড়েছে। কাল সকাল থেকেই লোডশেডিং শুরু হয়েছিল, যা রাতেও অব্যাহত থাকে।

‘গরম বেশি হলে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। এতে লোডশেডিংও বাড়ে।’

চাহিদার ৬০ শতাংশ সরবরাহ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর মহাব্যবস্থাপক দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে আমাদের চাহিদা ছিল ১০৩ মেগাওয়াট। সরবরাহ পেয়েছি ৬০ মেগাওয়াটের মতো।’

মঙ্গলবার সরবরাহের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাল গরম বেশি ছিল। তাই ঘাটতিও বেশি ছিল। এতে লোডশেডিংও বেশি করতে হয়েছে।’

তবে বুধবার আবহাওয়া ঠান্ডা থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা কম বলে জানান তিনি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আওতাধীন গ্রাহকদের প্রতি ৪ ঘণ্টা পরপর ১ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পিডিবি সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির।

তিনি বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম পাচ্ছি। বুধবার দুপুরে সিলেট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১২৩ মেগাওয়াট আর বিভাগে ৫৫০ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে সরবরাহ পেয়েছি জেলায় ১০০ মেগাওয়াট ও বিভাগে ৪২০ মেগাওয়াট।’

সব সময় দুটি করে ফিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৪-৫ ঘণ্টা পরপর প্রতিটি ফিডে ১ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে।

তার হিসাবেই দিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে ৫-৬ ঘণ্টা।

আব্দুল কাদির বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের পর তেল সংকট দেখা দিয়েছে। তাই তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ থাকায় গ্যাসের চাপ কম। এ কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও বন্ধ আছে। এতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এই ঘাটতির কারণেই লোডশেডিং হচ্ছে।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.