Sylhet Today 24 PRINT

পশুর হাড়-শিংও আর ফেলনা নয়

শাকিলা ববি |  ০৭ আগস্ট, ২০২২

আগে ঈদুল আযহায় গরু কোরবানি দেওয়ার পর গরুর মাথার খুলি ও শিং ঝুলিয়ে রাখা হত বাড়ির সামনে। এই খুলি আর শিং বাড়ির সামনে রাখলে ভূত-প্রেত আসবে না, এমনটি বিশ্বাস করা হতো তখন।

এখন দিন পাল্টেছে। ভূত-প্রেতে বিশ্বাস কমেছে। ফলে গ্রামের বাড়িতে এখন আর শিং-খুলি ঝুলে থািকতে দেখা যায় না। তবে এই উচ্ছিষ্ট হাড় ও শিংয়ের কদর এখন দেশ বিদেশে।

গরু, মহিষ, ছাগলের মাংস খাওয়ার পর ফেলে দেওয়া হাড় এখন রপ্তানিযোগ্য পণ্য। তবে সিলেটে এখনো খুব একটা জনপ্রিয় হতে পারেনি এই ব্যবসা। দুয়েকজন ব্যবসায়ী স্বল্প পরিসরে এই ব্যবসা করছেন। তবে এই খাতে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে অপ্রচলিত এই পণ্যে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মো. লায়েক আহমদ। সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইচক এলাকায় মেসার্স ফয়েজ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তার। প্রায় বছর দশেক আগে ভাঙ্গারি ব্যবসার সুবাদে ঢাকা গিয়ে পশুর উচ্ছিষ্ট হাড় ও শিংয়ের ব্যবসার খোঁজ পান তিনি। এরপর সিলেটে এসে ভাঙ্গারি ব্যবসার পাশাপাশি এই ব্যবসা শুরু করার উদ্যোগ নেন। তাই যারা তার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ভাঙ্গারি সামগ্রী বিক্রি করতো তাদেরকে অন্যান্য সামগ্রীর পাশাপাশি পশুর হাড় সংগ্রহ করতে বলেন। এই থেকে শুরু তার হাড়ের ব্যবসা।

মো. লায়েক আহমদ জানান, অনেক স্বল্প পরিসরে তিনি এই হাড়ের ব্যবসা শুরু করেন। আস্তে আস্তে সিলেট শহরসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার কসাইদের সাথে যোগাযোগ করেন হাড় সংগ্রহের জন্য। এখন প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২শ কেজি পর্যন্ত হাড় সংগ্রহ করেন তিনি। তিনিসহ চারজন শ্রমিক এই হাড় প্রক্রিয়াজাত করেন। বর্তমানে অনেকটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসব হাড় প্রক্রিয়াজাতের কাজ করছেন তিনি।

লায়েক ছাড়াও আরও একজন ব্যবসায়ী এই উচ্ছিষ্ট হাড় ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন অনেক দিন ধরে। কিন্তু ভাল পুঁজির যোগান না থাকায় বড় আকারে এই ব্যবসা দাঁড় করাতে পারছেন না।

মো. লায়েক আহমদ বলেন, পশুর হাড় সংগ্রহের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে কোরবানির ঈদ। এই ঈদই আমাদের ব্যবসার মৌসুম। তাই এবার ঈদেও অনেক পশুর হাড় সংগ্রহ করেছি।  এছাড়া নগরীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারের কসাই, টুকাইদের কাছ থেকে সারাবছর হাড় সংগ্রহ করি। তাদের কাছ থেকে কেজি ধরে এই হাড়গুলো কিনে প্রক্রিয়াজাত করি। তারপর ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল যশোরসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারদের কাছে বিক্রি করি।

তিনি বলেন, এ ব্যবসায় অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কারখানা করে মেশিনের মাধ্যমে হাড় প্রক্রিয়াজাত করলে অনেক লাভ করা করতে পারতাম। কিন্তু অর্থের যোগান না থাকায় কারখানা করতে পারছি না। বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এই ব্যবসার জন্য কেউ ঋণ দিতে চান না। অথচ এটা পরিবেশবান্ধব ব্যবসা। তাই দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশ দুই কি চিন্তা করে হাড় ব্যবসার মান উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।

এদিকে উচ্ছিষ্ট বা বর্জ্যকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগিয়ে সম্পদে রূপান্তর করলে পরিবেশ ভাল থাকবে বলে মনে করেন পরিবেশবীদরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য আব্দুল করিম কিম বলেন, পরিত্যক্ত পশুর হাড় পরিবেশ দূষণ করে। আমাদের দেশে পশু জবেহের পর পশুর হাড় খাল বিল জলাশয় বা উন্মুক্ত স্থানে ফেলে দেয়ার প্রবণতা আছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই অবস্থায় এই সব পশু বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য।

এই ব্যবসাকে অনেক সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে দ্য সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, সিলেটে এই কুরবানি ঈদে গবাদি-পশু জবাই হয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ। দৈনিক সিলেট জেলায় প্রায় ১০০০ গবাদি-পশু জবাই হয়। এই পশুর উচ্ছিষ্ট বর্জ্য যেমন হাড়, শিং, অণ্ডকোষ, মুত্রথলি ও চর্বি দিয়ে যে বহুমাত্রিক ব্যবহার করা যায় তা সম্পর্কে সিলেটের মানুষ অজ্ঞ। এবিষয়ে সেমিনার সেম্পজিয়াম করা প্রয়োজন। এ শিল্পের সাথে জড়িতদের নিয়ে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারে সিলেট চেম্বার।

তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারের এবিষয়ে আরও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। প্রাণীজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে এবিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। এবং এ শিল্পের সাথে মিশেনারিজগুলো আমদানীর ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া বা বিদেশী প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. রুস্তম আলী বলেন, এটা যদিও আমাদের অধিদপ্তরের কাজ না। তারপরও এই খাত যদি শিল্পের পর্যায়ে যায় তাহলে ভাল হবে। দেশের পরিবেশ ও অর্থনীতি দুটোতেই ভাল প্রভাব ফেলবে এই ব্যবসা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.