Sylhet Today 24 PRINT

শান্তিগঞ্জে বন্যায় সড়কের ক্ষতি ২শ কোটি টাকা

শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি |  ১৭ আগস্ট, ২০২২

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) প্রায় ১শ কিলোমিটার রাস্তা পানির নিচে তলিয়েছিলো। এতে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে রাস্তা-ঘাটের।

কোনো কোনো রাস্তার মাঝখান ভেঙে আলাদা হয়ে যায়, কোনো রাস্তার উপরের ঢালাই উঠে যায়, কোনো রাস্তায় তৈরি হয় বড় বড় গর্তের। মাটি সরে যায় অধিকাংশ রাস্তার। নতুন করে নির্মান করা অনেক রাস্তাও হয়ে পড়ে চলাচল অনুপযোগী। এতে প্রায় দু’শো দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে শান্তিগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি।

দীর্ঘদিন পানির নিচে ডুবে থাকা, পানির প্রচণ্ড স্রোতের কারণে পানিতে ধুয়ে যায় (ওয়াস আউট) রাস্তায় থাকা মাটি। এজন্য রাস্তার এমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা এলজিইডির কর্মকর্তারা।

শান্তিগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের এলজিইডির প্রায় সকল রাস্তাই পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলো। এতে রাস্তায় থাকা মাটি ওয়াস আউট হয়েছে (ধুয়ে গেছে)। অনেক পাকা রাস্তার ভেঙ্গে গেছে। রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়েছে। ঢালাই উঠে সুড়কি বেরিয়ে পড়েছে অনেক রাস্তার। উপজেলায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার রাস্তার এমন ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতি পরিমান টাকার অঙ্কে প্রায় ২০২ কোটি টাকা হবে।

সূত্র জানায়, এলজিইডির উপজেলা সদরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সড়ক, ইউনিয়ন পর্যায়ে তুলনামূলক বড় সড়ক, গ্রামাঞ্চলের সড়ক ধরণ এ ও ধরণ বি ক্যাটাগরির সড়ক রয়েছে। গুরুত্বের ভিত্তিতে এসব সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হবে। রাস্তা সংস্কারের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন আসলে সংস্কার কাজ শুরু হবে। তবে খুব দ্রুত এ কাজ শুরু হবে বলে ধারণা করছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ডুংরিয়া বাজার থেকে হাঁসকুড়ি-ধলমৈশা সড়ক, আক্তাপাড়া মিনাবাজার থেকে ইসলামপুরের সড়ক, ছয়হারা-মৌগাঁও পয়েন্ট থেকে লালপুর-সলফের রাস্তা, আমরিয়া গ্রামের রাস্তাসহ উপজেলার প্রায় সবক’টি প্রধান প্রধান সড়কের পাশ থেকে মাটি সরে গেছে, পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে, অনেক যায়গায় রাস্তা থেকে পাকা স্ল্যাব সরিয়ে দিয়েছে পানির প্রচণ্ড স্রোত। বীরগাঁও’র প্রধান রাস্তা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। বাজার থেকে উমেদনগর পর্যন্ত রাস্তার পাকা স্ল্যাব সরিয়ে দিয়েছে পানির স্রোত, বীরগাঁও যাত্রী ছাউনি থেকে স্কুল-পয়েন্ট হয়ে হাঁসকুড়ির রাস্তার বেহাল দশা, উঠে গেছে পাকা চটকা, গর্ত হয়েছে কোনো কোনো স্থানে, পাশ থেকে সরে গেছে মাটিও। সলফ-ধরমপুর রাস্তার তো আরো বেহাল অবস্থা। দরগাপাশার ভমবমি বাজার থেকে ইশাখপুর-শ্রীরামপুর স্কুল হয়ে যে রাস্তা গিয়েছে সে রাস্তার অবস্থাও প্রায় চলাচল অনুপযোগী। আক্তাপাড়া-ইসলামপুর সড়কের ভয়াবহ অবস্থা, আমরিয়া-বাংলা বাজারের রাস্তাও ভেঙে গিয়েছে। আক্তাপাড়া বাজার থেকে নূরপুর গ্রামের রাস্তা এখন নেই বললেই চলে। গ্রামবাসীরা রাস্তাটিকে এখন নিজেদের দুঃখের আরেক নাম দিয়েছেন। এদিকে পূর্ব পাগলায় খাড়াই যাত্রী ছাউনি থেকে পিঠাপশী পর্যন্ত সড়ক, দামোধরতপী থেকে বেতকোনা, আলমপুর, ঘোড়াডুম্বুরের রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ বন্যায়।

পঞ্চগ্রাম-চিকারকান্দি গ্রামের নির্মাণাধীন রাস্তা থেকে সরে গেছে মাটি। একই অবস্থা গনিগঞ্জ-শিমুলবাক, নোয়াখালী বাজার-জিবদারা ও রঘুনাথপুর-স্কুল ও মসজিদে যাওযার রাস্তার। পাথারিয়া বাজারের খেয়াঘাট পার হওয়ার পর নদীর পূর্ব পাড়ের সবগুলো গ্রামে চলাচলের প্রধান সড়কটিরও বেহাল দশা। আসামমুড়া থেকে জয়সিদ্ধি পর্যন্ত সড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি করেছে এবারের বন্যা। পশ্চিম পাগলার হোসেনপুর পয়েন্ট থেকে নিদনপুর হয়ে ছুনানপুর পর্যন্ত সড়কটি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। স্থানীয় এলাকাবাসীরা এসব রাস্তা দ্রুত সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের জোর দাবি জানান।

আসামমুড়া গ্রামের বাসিন্দা ও দিরাই সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া আহমদ শিপন বলেন, বন্যায় রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের তো বটেই পাথারিয়া বাজারের পূর্ব পাড়ের সম্পূর্ণ রাস্তায় এখন বিপজ্জনক। খেয়াঘাট থেকে গ্রামে উঠার রাস্তাটির কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। খুবই খারাপ অবস্থা। রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কার করা খুব জরুরি।

বেতকোনা গ্রামের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বন্যায় রাস্তার দু’পাশ থেকে মাটি সরে গেছে। ঢালাই ভেঙে পড়ছে। পুনঃসংস্কার জরুরি। তারাতারি রাস্তা ঠিক করার দাবি করছি।

শ্যামল বিশ্বাস নামের পশ্চিম পাগলার এক বাসিন্দার বলেন, আমাদের গ্রামের রাস্তার তল থেকে সব মাটি সরে গিয়েছে। প্রচণ্ড ঢেউয়ের কারণে পাকা অংশ সরে গেছে। রাস্তা দ্রুত ঠিক করা হোক।

পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রাইজুল বলেন, আমাদের ইউনিয়ে প্রবেশের প্রধান সড়ক, যাত্রী ছাউনি থেকে হাঁসকুড়ি, বাজার থেকে উমেদনগর, সলফ থেকে ধরমপুরসহ সব রাস্তারই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব রাস্তার দ্রুত সংস্কার জরুরি।

শান্তিগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) কর্মকর্তা আল নূর তারেক বলেন, বন্যায় আমাদের উপজেলায় ১০০ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। যার নির্মাণ বা সংস্কার ব্যয় ধরা হয়েছে ২০২ কোটি টাকা। আমরা প্রকল্প প্রস্তুত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে চাহিদা পাঠিয়েছি। প্রকল্প অনুমোদন হয়ে আসলেই আমরা কাজে হাত দেবো। আশা করছি আগামী অর্থ বছরে (২০২২-২৩) এ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। গুরুত্বের ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে আমরা কাজ করবো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.