Sylhet Today 24 PRINT

টাকা ছাড়া কাজ হয় না নির্বাচন অফিসে!

সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি চরমে

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং  |  ১৮ আগস্ট, ২০২২

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। দালালদের মাধ্যমে সেখানে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে অফিসের কর্মচারীরা। দালাল ছাড়া কেউ অফিসে সেবা নিতে গেলে শুরু হয় নানা টালবাহানা ও হয়রানি। চাহিদা মতো টাকা না দিলে হয়রানির যেন শেষ নেই।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহও নির্বাচন কর্মকর্তার কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সরেজমিনে বুধবার (১৭আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে  উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচন অফিসের সামনে ও ভেতরে সেবা গ্রহীতাদের ভিড়। ভিড় ঠেকাতে নির্বাচন কর্মকর্তা অফিসের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। নির্বাচন কর্মকর্তা আরমান ভুইয়া অফিসে নেই। অন্যদিকে ভিতরের দরজা রয়েছে খোলা।

আইডি কার্ডে নানা সমস্যা নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে সেবাগ্রহীতা এসেছেন। কিন্তু তারা এসে কাজ তো করাতে পারছেনই না উল্টো শিকার হচ্ছেন হয়রানির। নিজেরা কাজ করাতে না পারলে অফিসের লোকদের মাধ্যমে কাজ করালে সেটা দ্রুত ই হয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে এলাকার বেশ কিছু মানুষের ভালো সম্পর্ক থাকায় কার্যত তাদের মাধ্যমে কাজ করাতে চাইলে সেটা নিমিষেই হয়ে যায়। তবে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। এই অঘোষিত দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই মেলে কাজের রাস্তা। বয়স কম হলেও দালালের মাধ্যমে সেটা ঠিক করে দেয়া হয়। এমনকি নতুন ভোটার হতে চাইলেও টাকা ছাড়া সেটা করা হয়না বলেও জানা যায়।

উপজেলা সদরের তাজউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার ছেলের আইডি কার্ড ঠিক করতে নির্বাচন অফিসে আসি। নির্বাচন অফিসে শত শত সেবা গ্রহীতার কার্ড আটকে রেখে টাকা আদায় করতে হয়রানি করছে। হয়রানির কারণ জানতে চাইলে নির্বাচন কর্মকর্তা অফিসের লোকেরা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।

শরীফখানী গ্রামের বাসিন্দা জনি মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমি বিদেশ যেতে দ্রুত আইডি কার্ড করতে অফিসে আসি। কিন্তু নির্বাচন কর্মকর্তা আমার সব কাগজ দেখে বলেন, আইডি কার্ড ঠিক করা যাবেনা সার্ভার সমস্যা। কবে ঠিক হবে বলা যাচ্ছে না। তবে শুনেছি এর জন্য নাকি নির্বাচন অফিসারকে টাকা দিতে হয়। টাকা দিলেই কাজ হবে।

সদরের আবু হুরায়রা নামে এক যুবক নাম সংশোধনী করার জন্য গত ৩ তারিখ আবেদন জমা দিয়েছিলেন কিন্ত এখন পর্যন্ত কোন কিছুই হয়নি। অফিসে এসে নির্বাচন কর্মকর্তাকে পাননি তিনি।

বলাকীপুরের মনুসর আহমেদ জানান, ফিঙ্গার আর সাইন দেয়ার জন্য আমি এই অফিসে ১ সপ্তাহ যাবত আসা-যাওয়া করছি। কিন্তু আমি এসে নির্বাচন অফিসারকে একদিনও পায়নি। আমাকে আজ বলা হয়েছে অফিসে নাকি ফিঙ্গার নেয়ার মেশিন নাই।

বানিয়াচং নতুন বাজারের ব্যবসায়ী সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন জানান, চাকরির সুবাদে আমি সুনাগঞ্জে ছিলাম। বিগত রমজান মাসে ভোটার আইডি কার্ড স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছি নির্বাচন অফিসে। আবেদন করার পর এসএমএস দেয়ার কথা বলেছিল কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো এসএমএস আসেনি। অফিসের যাওয়ার পর কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে শুধু তারিখ দিয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগী সাজ্জাদ হোসেনের ফাইল কি অবস্থায় আছে সেটা জানতে চাইলে দ্রুত বের করে তাৎক্ষনিক অনলাইনে আপলোড করেছে অফিসের কম্পিউটার অপারেটার।

এতো দিন কেন সেটা আপলোড করা হয়নি জানতে চাইলে অপারেটার জানান, কাজের ঝামেলায় কারণে করা হয়নি। তারপর অফিসেও লোকবল কম।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচন অফিসার ঠিক মতো অফিসে আসেন না। তাকে আমরা প্রশাসনের মাসিক সভায়ও আনতে ব্যর্থ হয়েছি। প্রতিদিন শত শত সেবা প্রত্যাশীরা তাদের নানা সমস্যা নিয়ে আসে কিন্তু এসে তাকে না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। আমি এই বিষয়টা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। এভাবে তো একটা সরকারি অফিস চলতে পারে না। অ

বুধবার অফিসে গিয়েও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরমান ভুইয়াকে পাওয়া যায়নি।

 অনিয়ম ও হয়রানি বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আরমান ভুইয়ার সাথে তার ব্যবহৃত নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ সাদেকুল ইসলাম জানান, বানিয়াচং উপজেলা নির্বাচন অফিসার আরমান ভুইয়ার কিছুদিন পূর্বে একটি অপারেশন হয়েছিল এইজন্য হয়তো অফিসে আসতে পারেন নি।

তিনি বলেন, এই নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আমার কানে আসছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে উঠা কিছু অভিযোগ আমাদের তদন্তনাধীন আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ জানান, নির্বাচন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পর আমি নিজে একদিন তার অফিসে গিয়েছি। কিন্তু সেখানে যাওয়া পর তাকে গিয়ে পাইনি। দেখলাম বারান্দার দরজা বন্ধ। ভিতরেরটা খোলা রয়েছে। অসংখ্য মানুষ সেবা নেয়ার জন্য নির্বাচন কর্মকর্তার অপেক্ষা করছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.