Sylhet Today 24 PRINT

শান্তিগঞ্জে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা

২২ মন্ডপে পালিত হবে দুর্গোৎসব

ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ:: |  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

দেবীর দুর্গার ডান হাতে পরম যতনে মাটি লাগাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব সুভাস দাশ৷ বয়স যখন ১২ কিংবা ১৩ তখন থেকেই দেবীর প্রতিমা তৈরির এ কাজটি শুরু করেন তিনি। এতে তিনি পান নির্মল আনন্দ, স্বর্গীয় অনুভূতি। অবশ্য এর জন্য একটি সম্মানিও পান তিনি। তাঁর পাশেই কাজ কার্তিকের মাথার কাছে আলতো করে লেপে দিচ্ছিলেন একজন। এরপর ময়ূরের পেখম ঠিক করলেন। তিনি রতন দাশ।

আরেকজন বাক্-প্রতিবন্ধী দীপ্ত দাশ (১২)। শিশু বয়সেই লেগে গেছেন ঐশ্বরিক কাজে। প্রতিমা তৈরিতে জ্যেষ্ঠ দু’জন কারিগরতে সমানে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তিনি। অসুরের হাতে থাকা সাপের লেজ ঠিকটাক করছিলেন। প্রতিমা তৈরির এ দল এসেছেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন সনাতন সংঘের প্রতিমা তৈরি তাদের ৭ম কাজ। জেলার বিভিন্ন জায়গায় আরো ৬টি প্রতিমা তৈরি করতে সর্বোচ্চ ব্যস্ত সময় পার করছেন এ ত্রয়ী মৃৎশিল্পীগণ। শুধু তারাই নন শান্তিগঞ্জ উপজেলার ২২টি মণ্ডপে এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগরেরা।

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ২২টি মণ্ডপের মাধ্যমে উদযাপন হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। জয়কলস ইউনিয়নে সর্বোচ্চ মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে। এ ইউনিয়নের ৮টি মণ্ডপে দেবী দুর্গার আরাধনা করবেন ভক্তরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মণ্ডপ হচ্ছে পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নে। ৫টি মণ্ডপের মাধ্যমে দেবীর পায়ে মাথা ঠুকবেন ভক্তকূল। পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নে ৩টি, দরগাপাশা ও পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নে ২টি করে মোট ৪টি, পাথারিয়া ও পূর্ব পাগলা ইউনিয়নে ১টি করে মোট ২টি মণ্ডপে দেবী দূর্গার আরাধনায় ব্যস্ত থাকবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

আর মাত্র ৮দিন বাকী। নবম দিন শনিবারে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এ উৎসব। দেবী দুর্গাকে বরণ করতে সারা দেশের ন্যায় শান্তিগঞ্জ উপজেলায়ও প্রতিমা তৈরিসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভক্তকূল। পহেলা অক্টোবর শনিবারে মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। পরদিন ২ অক্টোবর মহাসপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান। ৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী এবং ৪ অক্টোবর মহানবমী পূজা। ৫ অক্টোবর বুধবারে মহাদশমী বা বিজয়া দশমী হবে। এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। দেবী দুর্গা মর্তে আসছেন বাপের বাড়ি। আর তাই আষাঢ় থেকেই আশ্বিনের অপেক্ষায় থাকেন ভক্তকুল। কৈলাশ থেকে মর্তলোকে ফিরতে পঞ্জিকা অনুযায়ী বাহন হিসেবে এ যাত্রায় দেবীর সঙ্গী হবে গজ বা হাতি। আর ফিরার কথা নৌকায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, দেবী দুর্গা হাতির পিঠে চড়ে আগমনের অর্থ হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। অর্থাৎ চাষবাস ভালো হবে। ফর-ফসলে পরিপূর্ণ হবে পৃথিবী। আর নৌকায় গমনের অর্থ হচ্ছে জলবৃদ্ধি এবং শস্যবৃদ্ধি। এতে বন্যা হওয়ার পূর্বাভাস থাকে।

দেবী দূর্গা আগমনের ব্যপারে সজল সূত্রধর, সত্য সূত্রধর, রিংকু দেব বলেন, মায়ের আগমনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। মা আসবেন, মায়ের পায়ে পরম তৃপ্তি নিয়ে ভক্তি করবো এ অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে। আমরা চাই, মা দুর্গা যেমন অসুরবিনাশ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তেমনি পৃথিবী থেকেও যেনো সকল অসুররূপী মানুষ বিনাশ হয়। এখন কারিগরেরা কাজ করছেন। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে আশা করছি প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে।

 শান্তিগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জ্যোতি ভূষণ তালুকদার ঝন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিত চৌধুরী টপ্পা বলেন, প্রতিমা তৈরীর কারিগরেরা এখন খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শত্রুমর্দন সনাতন সংঘের প্রতিমা যাঁরা তৈরি করছেন তাঁরা আরো ৬টি জায়গায় প্রতিমা তৈরি করছেন। অর্থাৎ আজ এখানে তো কাল ওখানে। ব্যপক ব্যস্ত তারা। তবু আশা করছি ষষ্ঠীর দু’একদিন আগে আমাদের উপজেলার সব প্রতিমা তৈরি হয়ে যাবে। এ বছর আমাদের উপজেলায় ২২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.