Sylhet Today 24 PRINT

আপত্তির মুখে কমলো সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মকর্তাদের বিদেশ প্রশিক্ষণ বাবদ ২ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় কমানো হচ্ছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) আপত্তির মুখে এ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ টাকা। প্রস্তাব ছিল ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ খাতে ব্যয় কমছে ৮০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এছাড়া বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব করায় সেগুলোও কমিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি সংশোধনের জন্য ফেরত দেওয়া হয়েছে।

আর সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধনের মধ্যেও উল্লিখিত প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে গাড়িবিলাসের প্রস্তাব করেছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ। এক্ষেত্রে ৬টি দামি জিপ গাড়ি, ৪টি পিকআপ, ১টি মাইক্রোবাস এবং ৬টি মোটরসাইকেল কিনতে চাওয়া হয়েছে। এই ১৭টি গাড়ির জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। তবে এক্ষেত্রে জোর আপত্তি দেয়নি পরিকল্পনা কমিশন। কৌশলে শুধু বলা হয়েছে অর্থ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের জনবল নির্ধারণসংক্রান্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ড্রাইভারের সংখ্যার ভিত্তিতে যানবাহনের সংখ্যা ও ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে।

এছাড়া সে অনুযায়ী পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট, গ্যাস ও জ্বালানির ব্যয় ধরতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ঋণে ‘সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়কটি চার লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি ‘উপকূলীয় শহর জলবায়ুসহিষ্ণু’ প্রকল্পের আওতায় ২৯টি পিকআপ ভ্যান ও ৭টি জিপ কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থ বিভাগ ৩৬টি গাড়ি কেনার প্রস্তাবের বিপরীতে অনুমোদন দিয়েছে মাত্র ৩ জন ড্রাইভারের। এ কারণে ৩টি জিপ কেনার সুপারিশ করেছে পিইসি।

এতে জনবল ও যানবাহন খাতে অর্থ সাশ্রয় হবে বলেও উল্লেখ করে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৫১৬ কোটি টাকা, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ২ হাজার ১১৫ কোটি এবং অনুদান থেকে ৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বিষয়টি এখনো আমার কাছে আসেনি। উন্নয়ন প্রকল্পে যে কোনো অপচয় কমাতে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগের চেয়ে এ রকম ব্যয় প্রস্তাব কম আসছে। আমি বিদেশ (আমেরিকা) থেকে ফিরে এসে দামি গাড়ি কেনার প্রস্তাব বিষয়ে আলোচনা করব। প্রয়োজন ছাড়া এরকম দামি গাড়ি বিদেশ প্রশিক্ষণ বিষয়ে একনেকে নেওয়া হবে না।

সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, মোটেও গাড়িবিলাসের প্রস্তাব নয়। ১ কোটি টাকার গাড়ি এখন বিলাসী গাড়ি নয়। প্রগতির নরমাল পাজেরো গাড়ির দাম এরকমই। যেগুলো ইউএনও, ডিসিরা ব্যবহার করেন। এছাড়া ডলারের দাম বাড়ায় গাড়ির দামও বেড়েছে। একজন পিডিকে তো আর পিকআপে পাঠানো যায় না। প্রকল্পের গাড়ি যত চলবে, তত তদারকি বাড়বে, এই জিনিশটা বুঝতে হবে।

প্রকল্পটির ব্যয় প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৬টি জিপ কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এতে প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। প্রকল্প পরিচালক (পিডি), অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রকল্প পরিচালক (এপিডি), উপপ্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) এবং ৩ জন প্রকল্প ম্যানেজারের জন্য এসব গাড়ির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এছাড়া ৪টি পিকআপ কেনার জন্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এতে প্রতিটির দাম পড়বে ৫৮ লাখ টাকা। একটি মাইক্রোবাসের দাম ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।

এছাড়া ৬টি মোটরসাইকেলের দাম ধরা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। এতে একেকটির দাম পড়বে ২ লাখ টাকা করে। প্রকল্প প্রস্তাবে থোক হিসাবে রাজস্ব খাতে গাড়ি ভাড়া বাবদ ৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে সভায় বলা হয়েছে মূলধন খাতে গাড়ি ক্রয়ের প্রস্তাব করা হলেও রাজস্ব খাতে গাড়ি ভাড়ার সংস্থান যৌক্তিক নয়। রাজস্ব খাতে গাড়ি ভাড়া বাবদ প্রস্তাবিত ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা কমিয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রাক্কলনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার বলেন, এ বিষয়ে আমরা অনেক কঠোর। সরকারিভাবে এখন গাড়ি কেনা বন্ধ রয়েছে। তাই এ বিষয়ে অনুমোদন দেওয়ার সুপারিশ করার কোনো ব্যাপার নেই। তবে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন হয়ে এলে আবারও পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকবে।

সূত্র জানায়, ‘সিলেট-চারখাই-শেওলা মহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৭২ কোটি ৩২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ২৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ২ হাজার ৬০৪ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা।

ওই সভায় বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি খাতে ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং স্থানীয় প্রশিক্ষণে সরকারি খাতে ৩০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে, যা যৌক্তিকভাবে কমানো যেতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ব্যয় ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণের বিষয় ও অংশগ্রহণকারী বিভাগ সংস্থাগুলোর প্রতিনিধির সংখ্যাসহ পুনর্গঠিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে।

ফলে এ খাত থেকে ব্যয় কমে যাচ্ছে ২ কোটি ৬ লাখ টাকা। প্রকল্পে বিভিন্ন পরামর্শক সেবা খাতে মোট ১০৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পিইসি সভায় বলা হয়, মাত্র ৪২ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য এত বেশি পরিমাণ পরামর্শক সেবার ক্রয়ের বিষয়টি যৌক্তিক নয়।

খবর: যুগান্তর

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.