Sylhet Today 24 PRINT

বিদ্যুৎ সংযোগের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ যুবলীগ নেতা ও ইলেকট্রিশিয়ানের বিরুদ্ধে

কামরুল হাসান নোমান, জুড়ী: |  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা চা বাগানের ৩৪ চা-শ্রমিক পরিবারের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ফুলতলা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোজাহিদ ভুট্টু ও ইলেকট্রিশিয়ান সাইফুর রহমান সাইফুলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।

ভোক্তভোগী চা-শ্রমিক পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোজাহিদ ভুট্টু ও ইলেকট্রিশিয়ান সাইফুর রহমান সাইফুল ফুলতলা চা বাগানের কাটাটিল্লা লাইনের (বস্তি) ১০ পরিবার, শিব মন্দির লাইনের ১০ পরিবার এবং ৫ নম্বর লাইনের ১৪ পরিবারের ঘরে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কথা বলে যোগাযোগ করে। তারা (ভুট্টু ও সাইফুল) ঘর প্রতি ৩ হাজার টাকা করে ১ লাখ ২ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলেন। এরপর প্রথম কিস্তিতে চা-শ্রমিকেরা ভুট্টু ও সাইফুলকে নগদ ৪২ হাজার টাকা দেন। এর কিছুদিন পর ভুট্টু আবেদনের কথা বলে আরও ৩ হাজার ৪০০ টাকা নেন। কিন্তু ১৩ মাস পার হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাননি চা-শ্রমিকেরা। এখন উল্টো ইলেকট্রিশিয়ান সাইফুর রহমান সাইফুল চা-শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।

ফুলতলা চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি রবি বুনার্জি বলেন, ‘আমাদের ঘরে বাগান থেকে ওয়াপদার (পিডিবি) লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ দিয়েছে। কিন্তু এই বিদ্যুতে ঠিকমতো লাইট জ¦লে না, ফ্যানও চলে না। তার পরও আমরা কোনোমতে চলছি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের একদিন যুবলীগ নেতা ভুট্টু ও সাইফুল বাগানে এসে বলে তোমাদের পল্লী বিদ্যুৎ দিয়ে দেই। খুঁটি থেকে ঘরের মিটার পর্যন্ত লাইন পৌঁছে দেবো। এজন্য টাকা খরচ লাগবে। সে প্রথমে ঘর প্রতি ৩ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়ার কথা বলে। পরে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম কিস্তিতে তাকে আমরা ৪২ হাজার টাকা দেই। আরও একদিন যুবলীগ নেতা ভুট্টু এসে নিয়েছে ৩ হাজার ৪০০ টাকা।

‘গত বছর দুর্গাপূজার আগে কারেন্ট দেওয়ার কথা ছিল। আরেক দুর্গাপূজা চলে আসছে। কিন্তু বিদ্যুৎ পাইনি আমরা। এখন সাইফুল ও ভুট্টুকে ফোন দিলে ফোনও ধরে না। আমরা গরীব মানুষ। কষ্ট করে টাকা দিয়েছি। টাকাও দিচ্ছে না।’

ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য ও ফুলতলা চা বাগানের বাসিন্দা গোপাল সাঁও বলেন, ‘ভুট্টু ও সাইফুল পল্লী বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে যোগাযোগ করলে তারা প্রথমে অনেক টাকা বলে। পরে ঘরপ্রতি ৩ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে। এরপর বাসু সর্দারের ঘরে বসে সাইফুলকে ৩৯ হাজার, পরে আরও ৩ হাজার টাকা দেই। কিন্তু বিদ্যুৎ তো দেয়নি। উল্টো যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় দেড় মাস আগে বাজারে ভুট্টুকে পেয়েছিলাম। অনেক কথার পর বলে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ২০দিন সময় নিয়েছে। কিন্তু পরে আর যোগাযোগ করেনি।’

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মোজাহিদ ভুট্টুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

তবে ইলেকট্রিশিয়ান সাইফুর রহমান সাইফুলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এলবিন টিলা চা-বাগানের শ্রমিকদের সাথে একসাথে চুক্তি হয়েছিল বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য। কাটাটিল্লার শ্রমিকদের সাথে কোনো চুক্তি হয়নি।’

তবে ৩৪ পরিবার চা-শ্রমিকের কাছ থেকে ৪২ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই টাকা নেওয়া হয়েছে ঢাকাসহ বিদ্যুৎ অফিসে যাতায়াত আর আবেদন করার জন্য। বিদ্যুৎ অফিস ও বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতসহ অনেক খরচ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের বিষয় তো বুঝতেছেন। এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে গেলে টাকা দেওয়া লাগে।’

মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বড়লেখা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী উপ মহাব্যবস্থাপক (এজিএম ও এন্ডএম) এ কে এম আশরাফুল হুদা বলেন, ‘জুড়ীতে আমাদের নিবন্ধিত দুজন ইলেকট্রিশিয়ান আছে। সাইফুল নামে নিবন্ধিত কোনো ইলেকট্রিশিয়ান নেই। এখন কেউ যদি বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেয়, সেই দায়িত্বটা তার। নিবন্ধিত ইলেকট্রিশিয়ান ছাড়া অন্য কারো অপরাধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই আমাদের। তারপরও আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, ফুলতলা চা বাগানের আওতাধীন এলবিন টিলা ফাঁড়ি চা বাগানের ৩৫০ চা-শ্রমিকের ঘরে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগের বিনিময়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা করে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা নেওয়ার চুক্তি করে প্রতারক চক্র। ২০২১ সালে চুক্তি অনুযায়ী চা-শ্রমিকেরা প্রথম কিস্তিতে অগ্রিম ৭০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। এরপর সেখানে পল্লী বিদ্যুতের ৩৬টি খুঁটি আসলেও কাজ হয়নি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি নিয়ে সিলেটটুডেতে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রথম কিস্তিতে নেওয়া ৭০ হাজার টাকা চা-শ্রমিকদের ফেরত দেয় ঠিকাদারের মনোনীত ইলেকট্রিশিয়ান। এই ঘটনায় দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.