Sylhet Today 24 PRINT

প্রতারণার ফাঁদে শরীফের প্রবাসের ‘স্বপ্ন জেলবন্দী’, রিক্ত হস্তে দেশে

বড়লেখা প্রতিনিধি: |  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২২

প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সৌদি গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন শরীফ। সেখানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে।

সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন মৌলভীবাজারের বড়লেখার মো. শরীফ উদ্দিন (২৩)। কিন্তু সেখানে তার ভাগ্যে জুটেনি ভালো চাকরি। উল্টো সেখানে সৌদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে শরীফকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। পরে ১৬ দিন জেল খেটে শরীফ খালি হাতে দেশে ফিরেছেন।

শরীফ বড়লেখা সদর ইউনিয়নের গঙ্গারজল গ্রামের মো. আমির উদ্দিনের ছেলে।

এ ঘটনায় প্রতারণার অভিযোগে শরীফের বাবা বাদী হয়ে সম্প্রতি বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চারজনের নামে মামলা করেছেন।

আদালত চার আসামিকে আগামী ৬ ডিসেম্বর ধার্য তারিখে হাজির হতে সমন জারি করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, সৌদি আরবে বৈধ কাগজপত্র ও ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শরীফের পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা নিলেও তাকে সৌদি পাঠিয়ে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি। যার কারণে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খেটে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শরীফ খালি হাতে দেশে ফিরেছেন।

মামলায় বড়লেখা পৌরসভার পাখিয়ালা গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে মো. শাহজাহান কবির খোকন (৫০) ও তার ভাই (খোকনের) হুমায়ন আহমদ (৫২), পাখিয়ালা গ্রামের মৃত কুটু মিয়ার ছেলে মোস্তাব উদ্দিন (৫৫) এবং বড়লেখা সদর ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর ছেলে আলী আজাদ (৫৭)-কে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. শাহজাহান কবির খোকন ও তার ভাই হুমায়ন আহমদ ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রতারণার শিকার যুবক শরীফের বাবা আমির উদ্দিনকে প্রস্তাব দেন তাদের সরকার অনুমোদিত ট্রাভেলসের লাইসেন্স আছে। তারা ভালো ভিসা দিয়ে শরফিকে সৌদি পাঠাতে পারবেন। মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন হবে। তাদের সাথে মামলায় অভিযুক্ত মোস্তাব উদ্দিন ও আলী আজাদও একই প্রস্তাব দেন। এতে তাদের প্রস্তাবে আমির উদ্দিন রাজি হন। এরপর তাদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার চুক্তিপত্র হয়। আমির উদ্দিন ছেলেকে সৌদি পাঠানোর জন্য চুক্তি অনুযায়ী কয়েক দফায় টাকা পরিশোধ করেন। এছাড়া বিভিন্ন কাজের কথা বলে আরও প্রায় ১ লাখ ৭০ টাকা নেওয়া হয়। এরপর ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে সৌদি পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছার পর শরীফকে শাহজাহান কবির খোকনের লোকজন রিসিভ করে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শরীফ সেখানে কোনো লোক পাননি। শাহজাহান কবির খোকনের মোবাইলে ফোন দিলেও তাকে পাননি। অনাহারে-অর্ধাহারে এয়ারপোর্টে তিনদিন কাটে শরীফের। অসহায় অবস্থায় তাকে সেখানে পেয়ে এক ভারতীয় নাগরিক একটি গোদম ঘরে নিয়ে রাখে। এদিকে সৌদি থেকে ছেলের খবর না আসায় আমির উদ্দিন মামলায় অভিযুক্ত হুমায়ন, মোস্তাব ও আলী আজাদের কাছে যান। কিন্তু তারা খোঁজ নিচ্ছেন বলে নানা টালবাহানা করতে থাকেন। এরমধ্যে কয়েক মাস গেলেও বৈধ কাগজপত্র পাননি শরীফ। সৌদিতে অবৈধভাবে পালিয়ে থাকা অবস্থায়ও গ্রেপ্তার হন। সেখানে প্রায় ১৬ দিন জেল খেটে দেশে ফিরে আসেন শরফি।

আলাপকালে প্রতারিত যুবক শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘বৈধভাবে সৌদি পাঠানোর কথা বলে আমাদের থেকে তারা প্রায় ৬ লাখ টাকা নিয়েছি। ঋণ করে আমার বাবা অনেক টাকা দিয়েছেন। তারা আমার সাথে প্রতারণা করেছে। সৌদি পৌঁছে অসহায়ের মতো ৩ দিন এয়ারপোর্টের প্লোরে ঘুমিয়েছি। কেউ নিতে আসেনি। পরে এক ভারতীয় নাগরিক আমাকে নিয়ে তার একটি গোদাম ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে। তার (ভারতীয় নাগরিকের) ফোন থেকে শাহজাহান কবির খোকনকে দেই।

সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে ‘আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় আছি। তকে সৌদি আরবেই গুম করে ফেলব। আর আমাকে কোনো ফোন দিবে না’। ভয়ে আর ফোন দেইনি খোকনকে। এভাবে পালিয়ে কয়েক মাস থাকার পর আমি সৌদিতে গ্রেপ্তার হই। সেখানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নিঃস্ব অবস্থায় দেশে এসেছি।’

এ বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত মো. শাহজাহান কবির খোকনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হল তিনি বলেন, ‘তাকে সৌদি পাঠিয়েছি ঠিক আছে। সব অভিযোগ সত্য নয়। আমি তাদের কাছে আরও অনেক টাকা পাই।’

বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী ইয়াছিন আলী।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.