Sylhet Today 24 PRINT

ব্রয়লার মুরগিও গরিবের খাবার থাকল না

ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ |  ২২ মার্চ, ২০২৩

দেড়-দু’মাস আগেও মাছ কিনতে না পারলে একটা ব্রয়লার মুরগি কিনে বাড়ি ফিরতাম। দাম কম ছিলো বলে মাছের বদলে ব্রয়লার মুরগিই ছিলো ভরসা। ছেলে-মেয়েরাও বেশ খুশি হতো। আড়াই-তিনশো টাকা হলেই একটা মুরগি নিতে পারতাম। এখন এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম আড়াইশো টাকা। মাঝারি মানের একটা মুরগি কিনতে পাঁচশোর বেশি টাকা লাগে। গরুর মাংস, হাঁস, সোনালী কক, কোয়েল পাখিসহ সবধরনের মাংসের দাম বেশি। তাই আমাদের মতো গরিব মানুষেরা এখন আর মাংস খাওয়ার সাহস করতে পারি না। যে হারে মাংসের দাম বেড়েছে তাতে বুঝাই যাচ্ছে মাংস এখন আর গরিব মানুষের খাবার নয়। চাইলেই গরিব মানুষের মাংস খেতে পারবেন না। ব্রয়লার মুরগিও গরিবের খাবার আর থাকল না। প্রচণ্ড আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রিকশা চালক অজুদ মিয়া।

অজুদ মিয়া শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের পাগলা বাজারে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। চার মেয়ে ও এক ছেলেসহ সাত জনের সংসার তার। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয়-উপার্জন করেন তা দিয়ে এমনিতেই সংসার চলে না। তার ওপর মাংসের এমন মূল্যবৃদ্ধির জন্যই এই ক্ষোভ তার। এ ক্ষোভ শুধু যে রিকশাচালক অজুদ মিয়ার নয়। শান্তিগঞ্জের প্রত্যেকটি মানুষের ইউনিয়নের মানুষের মনের চাপা ক্ষোভ এটি।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শুক্রবার (২৪ মার্চ) থেকে পবিত্র রমজানের শুরু। রোজায় অন্যান্য মাসের তুলনায় মাংসের চাহিদা থাকে বেশি। তাই রোজার আগে মাংসের এমন দাম বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। সকল প্রকার মাংসের এমন দাম বৃদ্ধিতে ভোক্তা মহলেই যে শুধু প্রভাব পড়েছে তা নয়, ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ও। দামের এমন ঊর্ধ্বগতিতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যাও নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকের কোঠায়। বিক্রি কমেছে ব্যবসায়ীদের।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি ব্রয়লার মুরগির দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাস ধরে আকস্মিকভাবে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তে থাকে। উৎপাদনকারীরা জানান, ব্রয়লার মুরগির একদিনের বাচ্চার দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। খাবারের দাম আকাশচুম্বী। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে যে খাবার বস্তার দাম ছিলো আড়াই হাজার টাকা সেই খাবারের বস্তার দাম এখন কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার ৭শ ৫০ টাকায়।

তারা বলেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে, ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে মোরগের খাবার প্রস্তুতকারী কাঁচামাল (গম-ভুট্টা) আনা হতো। দুই দেশে যুদ্ধ চলমান থাকার কারণে সে খাবার আসছে না। তাই মুরগির উৎপাদন ও খাবারের দাম বেড়েছে। এছাড়াও বিদ্যুৎ, কর্মচারীদের বেতনও তো বেড়েছে। সব মিলিয়ে মুরগি উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে দাম বেড়েছে।

এদিকে, হাঁসের দামেও যেন আগুন লেগে আছে। একটি পুরনো হাঁস কিনতে হলে একজন ক্রেতাকে কমপক্ষে পাঁচ-ছয়শ টাকা খরচ করতে হবে। যে কোয়েল পাখির দাম মাস দু’এক আগেও যেখানে ছিলো প্রতিটি ৪০/৪৫ টাকা সে কোয়েল পাখি এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫/৭০ টাকা। সোনালী ককের দাম প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৬শ ৫০ টাকা। পাকিস্তানি মোরগেরও একই অবস্থা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ পর্যন্ত; যা আগে ৬শ বা সাড়ে ৬শ টাকা।

ব্রয়লার মুরগি ব্যবসায়ী শাহিন মিয়া জানান, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে মুরগির খাবারের দাম ছিলো পঁচিশশত টাকা সেই খাবারের দাম এখন ৩ হাজার ৭৫০ টাকা। জানুয়ারি মাসের দিকে আমরা যে বাচ্চা ১৮ থেকে ২০ টাকায় কিনেছি বর্তমানে সে বাচ্চা কিনতে হচ্ছে ৫৮ টাকায়। তবে, রমজানের পর থেকে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে সময় উৎপাদন না বাড়লেও চাহিদা কিছুটা কমবে। আবার ঈদের আগে বাজার ওঠার সম্ভাবনা আছে।

বীরগাঁও ইউনিয়নের বাবনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা লেবু মিয়া জানান, বাড়িতে ছোট্ট একটা অনুষ্ঠানের জন্য ৫/৬টা মুরগি নিতে এসেছিলাম, কিন্তু দাম দেখে কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.