নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩১ মে, ২০২৩
রোববার হঠাৎ করেই সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। সকালে আওয়া্মী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও রাতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল মেয়র আরিফের বাসায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। এর পর থেকে নগরজুড়ে আলোচনা চলছে, সাক্ষাতে তাদের লাপের বিষয় কী ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘তারা দুইজন সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। মূলত কুশল বিনিময় হয়েছে। সিটি নির্বাচন সামনে রেখে তারা দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন। এর বাইরে কিছুই আলাপ হয়নি।’
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না, তাই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম উভয়েই বর্তমান মেয়রের সহায়তা চেয়েছেন। আরিফুল হকও তাঁদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। প্রকাশ্যে তাঁরা বিষয়টিকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বললেও আসলে এখানে ‘ভোটের রাজনীতি’ রয়েছে।
মেয়র আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠ একজন জানিয়েছেন, গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে নগরের কুমারপাড়া এলাকায় মেয়র আরিফুল হকের বাসভবনে যান আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সেখানে তিনি প্রায় ৪৫ মিনিট অবস্থান করেন। একই দিন রাত ১২টার দিকে মেয়র আরিফুল হকের বাসভবনে যান জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি ২০ থেকে ২৫ মিনিট মেয়রের বাসভবনে ছিলেন। মেয়রের বাসভবনে তাদের চা-মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
এর আগে বিএনপির মনোনয়নে সিলেটে টানা দুইবার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক ২০ মে নগরে নাগরিক সভা করে এবারের সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দেন। বিএনপির সিটি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতি একাত্মতা জানিয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। এর আগে মেয়র আরিফুল হক এবারের নির্বাচনেও অংশ নেবেন বলে জোর গুঞ্জন ছিল। তখন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীরা আরিফুল হককে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে তাঁর সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
মেয়র আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত স্থানীয় বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা ছিল, আরিফুল হক নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি নির্বাচন বর্জন করায় সাধারণ ভোটাররা হতাশ হয়েছেন। এদিকে উন্নয়নকাজসহ নানা ইতিবাচক কাজের কারণে নগরে আরিফুল হকের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এই সুযোগটিই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী কাজে লাগাতে চেয়েছেন। তারা ভোটারদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে মেয়রের বাসভবনে গিয়েছিলেন।
অন্য আরেকটি সূত্রের দাবি, সিলেট বরাবরই সম্প্রীতির অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এখানে রাজনৈতিক সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে। নির্বাচন শেষে পরাজিত প্রার্থীদের বাসায় বিজয়ী প্রার্থীর যাওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত রয়েছে সিলেটে। একই পরম্পরায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ভিন্ন রাজনৈতিক দলের হলেও আরিফুলের বাসায় সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘তিনি (আরিফ) নগরের নির্বাচিত মেয়র। তিনি ও তার স্ত্রী নগরের সম্মানিত ভোটার। সে কারণে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে তাদের কাছে গিয়েছি। আসলে সিলেট সম্প্রীতির নগর। দলমতনির্বিশেষে এখানে সবাই সম্প্রীতির রাজনীতিই করেন। সে চর্চা আছে বলেই মেয়রের বাসভবনে গিয়েছি।’
এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়রের সঙ্গে দেখা করে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছি। এর বাইরে অন্য কোনো রাজনীতি এখানে নেই।’
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটিতে ইভিএমে ভোট হবে। এরই মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ১ জুন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২ জুন। এরপর প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু করতে পারবেন।