Sylhet Today 24 PRINT

সৌম্য-মৃগাঙ্ক-শিবরঞ্জনীরা নেই, বেঁচে আছে কেবল মাধুশ্রী

সিলেটে একসঙ্গে চার শিশুর জন্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

সিলেটে একসঙ্গে জন্ম নেওয়া চার নবজাতকের মধ্যে একে একে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। চতুর্থজনকে নিয়েও তৈরি হয়েছিল শঙ্কা। তবে শেষ পর্যন্ত চতুর্থ শিশুটিকে নিয়ে প্রায় ২৮ দিন পর হাসপাতাল ছেড়েছেন মা–বাবা।

শুক্রবার দুপুরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ রাসেল স্ক্যানু সেন্টার থেকে ২৮ দিনের শিশু মাধুশ্রী মা-বাবার সঙ্গে বাড়ি ফেরে।

এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চার সন্তানের জন্ম দেন সত্যরঞ্জন দেবনাথের স্ত্রী মমতা দেবী (২৭)।

সত্যরঞ্জন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা।

মমতা দেবী নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চারটি শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন। চারজনের মধ্যে দুজন ছিল ছেলে ও দুজন মেয়ে। এর মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্মের পর থেকে ওজন কম ছিল। চার শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম নেওয়ায় তাদের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষায়িত সেবাকেন্দ্র শেখ রাসেল স্ক্যানু সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর চার নবজাতকের মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ের মৃত্যু হয়। এর তিন দিন পর আরেক ছেলেশিশু মারা যায়। এরপর টিকে ছিল একটি মাত্র মেয়ে। তাকে নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে ২৮ দিন স্ক্যানু সেন্টারে থাকার পর শুক্রবার সুস্থ অবস্থায় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে শিশুটিকে।

মমতা দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্ত্বা হলে ১০ সপ্তাহের সময় জানতে পারেন, তার গর্ভে একসঙ্গে একাধিক ভ্রূণ বড় হচ্ছে। এর পর থেকে স্ত্রীকে আলাদাভাবে দেখভাল করতেন সত্যরঞ্জন। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ৪০ সপ্তাহের জায়গায় ৩০ সপ্তাহে ব্যথা উঠলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চার নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়। চারটি শিশু জন্মের ছয় দিন পর তাদের নাম রাখা হয়েছিল সৌম্য দেবনাথ, মৃগাঙ্ক দেবনাথ, মাধুশ্রী দেবনাথ ও শিবরঞ্জনী দেবনাথ। বেঁচে আছে কেবল মাধুশ্রী।

শিশুটির বাবা সত্যরঞ্জন দেবনাথ বলেন, চার সন্তানকে একসঙ্গে পেয়ে তিনি এবং পরিবারের লোকজন আত্মহারা ছিলেন। কিন্তু এরপরই বিষাদ নেমে আসে। একে একে তিন সন্তান মারা যাওয়ার পর তিনি এবং তার স্ত্রী অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন। মনের মধ্যে শঙ্কা ছিল, তাদের খালি কোলে বাড়ি ফিরতে হয় কি না? তবে শেষ পর্যন্ত একটি মেয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন, এতে তিনি খুশি। সত্যরঞ্জন বলেন, ‘অন্তত একটি সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি, এতে আমি এবং আমার স্ত্রী অত্যন্ত খুশি। পরিবারের সদস্যরাও খুশি হয়েছেন। তবে অন্যরা বেঁচে থাকলে আরও খুশি লাগত।’

সত্যরঞ্জন জানান, শিশুটি এখন মায়ের বুকের দুধ খেতে পারছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শিশুটিকে যেন বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হয়। এ ছাড়া হাসপাতালের ছাড়পত্রে আরও কিছু বিষয় লেখে দিয়েছেন। ছাড়পত্রে উল্লেখ করা নির্দেশনা অনুযায়ী শিশুটির যত্ন নেওয়া হবে।

একসঙ্গে জন্ম নেওয়া চার শিশুর মধ্যে একজনকে সুস্থ অবস্থায় মা–বাবার কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী। হাসপাতালের স্ক্যানু সেন্টার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্ক্যানু সেন্টারে যেসব শিশু ভর্তি করা হয়, তারা সবাই নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া। সময়ের আগে যেসব শিশু জন্ম নেয়, তারা নিজেরা অক্সিজেন নিতে কিংবা নিজেদের খাবার (মায়ের দুধ) খেতে পারে না। এ জন্য তাদের বিশেষভাবে একটি বক্সের মধ্যে রাখা হয়। স্ক্যানু সেন্টারে এখন পর্যন্ত একটি শিশুকে সর্বোচ্চ ৭৬ দিন পর্যন্ত পরিচর্যা করা হয়েছিল। এরপর সুস্থ অবস্থায় তাকে মা–বাবার কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.