Sylhet Today 24 PRINT

দখল-দূষণমুক্ত করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে

হবিগঞ্জে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস পালিত

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৪ মার্চ, ২০২৪

একসময় এই অঞ্চলে জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নদী। মানুষের জীবনযাত্রা, যোগাযোগ, পরিবহন ব্যবস্থা ছিল মূলত নদীনির্ভর। নদীকে কেন্দ্র করেই কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। আর বর্তমানে দখল, দূষণ, ভরাটের কারণে নদীর অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের নদীর প্রতি আগ্রহ আমাদের আশান্বিত করে।

হবিগঞ্জে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে "ছবি দেখি নদী চিনি” কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বাডস কেজি এন্ড হাই স্কুল প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখা ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার এই কর্মসূচির আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নদীর নাম, নদীর আলোকচিত্র সম্বলিত বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শন করা হয়। স্কুলের শত শত শিক্ষার্থী, অভিভাবক, নদীর ছবি ও পরিচিতি জেনে আনন্দ প্রকাশ করে।

বেলা ১১টায় বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে নদীকৃত্য দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল বক্তব্য দেন খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মোমিন, স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন তপু, শিক্ষক কাউসার আহমেদ, জন্ম জয় দাস, সজিব চন্দ্র গোপ, তুলনা দেব প্রমুখ।

বিভিন্ন ক্লাসের শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে নদীর ছবি ও নদীর নাম দেখে। এসময় অনেক শিক্ষার্থীদের নদীর নাম লিখে রাখতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা আয়োজকদের নদী বিষয়ক নানা প্রশ্ন করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অনেক পুরস্কার জিতে নেন।

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী হুমায়রা সাঁতার কাটার জন্য নদীকে স্বচ্ছ সুন্দর রাখার কথা উল্লেখ করেন।

একই শ্রেণির আনিসা বলেন, নানা বাড়ি আজমিরিগঞ্জে নৌকা দিয়ে যাওয়ার সময় খুব আনন্দ হয়। কারণ অনেক বেশি শব্দ হয় না। যানজট নেই।

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা সুতাং নদীর দূষণের কথা উল্লেখ করে বলেন, ফুফুর বাড়ির পাশে কালো কুচকুচে দুর্গন্ধযুক্ত পানি দেখতে খুব খারাপ লাগে।

নবম শ্রেণির ছাত্রী ঐশী বলেন, নদীতে ময়লা ফেললে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পানি বিষাক্ত হয়। সেই বিষ মাছসহ জলজ প্রাণির পেটে ঢুকে। নদীর সেই মাছ খেয়ে আমরা অসুস্থ হই।

খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, চরম সংকটে রয়েছে এই অঞ্চলের নদীগুলো। নদীর উপর স্থাপনা নির্মাণ, নদীকে কেন্দ্র করে কলকারখানা স্থাপনের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে নদী। কলকারখানার দূষণে সুতাং নদীকে মেরে ফেলা হচ্ছে। দেশের সকল আইন অমান্য করে ব্যাপক দূষণ চালিয়ে আসছে কলকারখানাগুলো যা নদী সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীর সাংবিধানিক অধিকারের উপর সরাসরি আঘাত।

খোয়াই নদী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে যন্ত্র দ্বারা বালু-মাটি উত্তোলনের কারণে নদীটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে মানুষকে বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে থাকতে হয়। নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মাছসহ জলজ প্রাণি। বৃষ্টির পানি ধারণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় পুরাতন খোয়াই এর ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু বিভিন্নভাবে এটি দখলে চলে গেছে।

পুরাতন খোয়াই নদী থেকে সকল ধরনের দখল, স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীটিতে নৌপরিবহন ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এতে করে শহরে যানজট নিরসনসহ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান ও পরিবেশ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। মাধবপুরে সোনাই নদীর বুকে গড়ে উঠেছে বিশাল স্থাপনা। যা অবশ্যই নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে সহজে দৃশ্যমান। এক সময় বড় বড় নৌকায় পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করা হতো নবীগঞ্জের শাখা বরাক নদী দিয়ে। এখন নদীটি ময়লা আবর্জনার ভাগাড় হয়ে আছে।

নদী জীবন্ত সত্তা। উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে চিহ্নিত বা দৃশ্যমান দখলদারদের স্থাপিত সকল অবকাঠামো দখলি অবস্থান অবিলম্বে ব্যতিক্রমহীনভাবে অপসারণ করে জেলার সকল নদী দখল, দূষণমুক্ত করে স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতের দাবি করেন তোফাজ্জল সোহেল।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নদীপথ ছিল আমাদের সহজ ও নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যম। আমাদের নদীগুলো অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে মহান মুক্তিযুদ্ধে ।

বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ বলেন, মানব সভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায়, নদী তীরেই গড়ে উঠেছে সভ্যতা ও সংস্কৃতি। কৃষিভিত্তিক জীবন ব্যবস্থা ঘটেছে নদী নির্ভর জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে। হবিগঞ্জের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। খোয়াই নদী একসময় খরস্রোতা ছিল। উজানে ভারত সরকারের বাঁধ নির্মাণ, দেশের অভ্যন্তরে নানারকম অত্যাচার, খনন না হওয়া ইত্যাদি কারণে নদীটির ধারা দিন দিন ক্ষীণতর হয়ে যাচ্ছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.