Sylhet Today 24 PRINT

চোরাকারবারিদের প্ররোচনায় ভারতের কয়লা খনিতে প্রাণ যাচ্ছে বাংলাদেশিদের

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর |  ১৯ মার্চ, ২০২৪

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ট্যাকেরঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই পথে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে কয়লা দুই বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও চারজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহতরা হলেন, উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা নয়াপাড়া (৩ নং ওয়ার্ড) গ্রামের বাসিন্দা শাহাব উদ্দিনর ছেলে খায়রুল মিয়া (২৭) ও একই গ্রামের রমজান মিয়ার ছেলে মুকলেছ মিয়া (২৫)। নিহত দুই জন সম্পর্কে তারা ভায়রা ভাই।

সোমবার (১৮ মার্চ) রাত ১১টার দিকে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাট সীমান্তে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের ১১৯৮ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ২ এস এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।

খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে তাহিরপুর থানা পুলিশ। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, কলাগাঁও, চারাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি, লালঘাট, বুরুঙ্গা ছড়া এলাকা দিয়ে রাতের আঁধারে উপজেলার সীমান্তের চিহ্নিত চোরাচালান চক্রের সদস্যরা চোরাই পথে অবৈধভাবে ভারত থেকে শত শত টন কয়লা বস্তায় ভরে স্থানীয় যুবকদের দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় চোরাচালানিরা লাকমা গ্রামের ১০-১৫ জন যুবককে রাত ১০টার দিকে ট্যাকেরঘাট স্কুল ও লাকমা বাজারের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১১৯৮ এর ২ এস এলাকা দিয়ে চোরাই পথে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতের কয়লা গুহা থেকে কয়লা আনতে পাঠায়।

ভারতের ওই এলাকায় একাধিক গুহা থাকলেও খায়রুল মিয়া ও মুকলেছ মিয়ার যাওয়া গুহায় অক্সিজেন সংকট ছিল। ফলে অনেকেই ওখানে যেতে চাইত না। গুহার ভেতর যাওয়ার পর তারা দুজন অক্সিজেন স্বল্পতার মধ্যে পড়ে। খবর পেয়ে সহযোগীরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তাদের উদ্ধার করে গুহার বাহিরে নিয়ে আসে। পরে দুজনকেই দ্রুত রাত ১২টায় তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে আসলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে, ওই গুহা থেকে নিহত দুই যুবককে উদ্ধার করতে গিয়ে আরও চারজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

সীমান্ত এলাকার সচেতন মহল দাবী করেন, চোরাকারবারিদের প্ররোচনায় একের পর এক যুবকের মৃত্যু হচ্ছে কয়লার গুহায়। যাদের প্ররোচনায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সেই সব কয়লা চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে ও তাদের সহযোগিতাকারী এবং তাদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। না হলে সীমান্ত এলাকায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটবেই।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্যাকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার সাইদুর রহমান বলেন, সীমান্ত এলাকার কঠোর নজরদারির রয়েছে আর নিয়মিত টহল দিচ্ছি আমরা। শুনেছি ভারতের কয়লা গুহায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তবে তারা কিভাবে আর কখন ভারতে প্রবেশ করেছে তা আমাদের জানা নেই।

এই বিষয়ে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ককে সরকারি মোবাইল (০১৭৬****১৩০) নাম্বারে ফোন দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল উপজেলার বালিয়াঘাট সীমান্ত ফাঁড়ির লাকমা এলাকা দিয়ে ভারতীয় চোরাই কয়লার কোয়ারি থেকে চুরি করে কয়লা আনতে গিয়ে কোয়ারির মাটি চাপা পড়ে অনিক মিয়া (২০) নামের এক বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু হয়। একই ভাবে ৪ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে ট্যাকেরঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতের শিবপুর বস্তি এলাকার কালা পাহাড়ের চোরাই কয়লার গুহার ভিতরে ডুকে (কয়লা কোয়ারি) কয়লার বস্তা নিয়ে আসার সময় বড় পাথর চাপায় রুবেল মিয়া (২৮) নামে যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত রুবেল মিয়া উপজেলা উত্তর বড়দল ইউনিয়ন রজনী লাইন গ্রামের কেনু মিয়ার ছেলে।

১৩ জানুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন বুরুঙ্গাছড়া এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে কয়লা আনতে যাবার পথে বিএসএফ গুলি করে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থা মারা যায়। এছাড়াও গত বছরের ৭ নভেম্বর চাঁনপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে কয়লা আনতে গিয়ে তিন বাংলাদেশিকে আটকের পর বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যম হস্তান্তর করে। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ ২০২৪) ভোর রাতে ১১৯৯ আন্তর্জাতিক পিলার ভারতের মেঘালয়ের ৪ নাম্বার নামক এলাকায় চোরাই পথে অবৈধভাবে ভারতের কয়লা গুহা থেকে কয়লা আনতে গিয়ে পাথর চাপায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের আইয়ুব আলী (২৪) নামে বাংলাদেশী যুবক নিহত হন। তিনি উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রজনী লাইন গ্রামের বাসিন্দা মজনু মিয়ার বড় ছেলে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.