Sylhet Today 24 PRINT

কচুরিপানা ও আগাছার নিচে চাপা পড়েছে স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্ন

লালমাটিয়া বধ্যভূমি

শাকিলা ববি  |  ২৫ মার্চ, ২০২৪

সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশ দিয়ে চলমান রেলপথ। এই সড়কের পারাইরচক লালমাটিয়া এলাকায় রেলপথের পাশেই একটি পরিত্যক্ত ডোবা। এই ডোবার কচুরিপানা ও আগাছার নিচে চাপা পড়েছে আমাদের স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্ন।

জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই জায়গায় এখনো নির্মাণ করা হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ। তাই অযত্ন অবহেলায় পরিত্যক্ত ডোবায় পরিণত হয়েছে সিলেট জেলার সবচেয়ে বড় লালমাটিয়া বধ্যভূমি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালমাটিয়াতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। এই ক্যাম্পে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী পুরুষ ধরে এনে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের কোটা পুরো হলে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠতো পাকবাহিনী। একসাথে শতাধিক মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হতো এই ক্যাম্পে। পরে এই লাশগুলো মাটিচাপা দেওয়া হতো পারাইরচক এলাকায় রেললাইনের পাশ ঘেঁষে।  স্থানীয় বাসিন্দাদের দিয়ে কবর খুঁড়ানো হত। প্রায় ৬০টি কবরের প্রতিটিতে ২০ থেকে ৪০ জনকে একসাথে মাটিচাপা দেওয়া হত।

মুক্তিযোদ্ধাদের মতে এই লালমাটিয়া হচ্ছে সিলেট জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও এখানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে এখন পর্যন্ত কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এখন সবচেয়ে বেশি অবহেলায় জর্জরিত।

জানা যায়,  ১৯৭১ সালের বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পের আওতায় সিলেট জেলার পাঁচটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরমধ্যে চারটি বধ্যভূমির কাজ শেষ হলেও জমি-সংক্রান্ত জটিলতায় লালমাটিয়া বধ্যভূমির কাজ আটকে আছে। এখানে প্রায় ১১ শতক জায়গার মধ্যে ৬৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু বধ্যভূমির কিছু জায়গা পড়ে রেলের জায়গায়। এ জায়গা এখনো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর করেননি। তাই এখনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, সিলেট জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি দক্ষিণ সুরমার লালমাটিয়া। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ বধ্যভূমিতে অনেক মানুষের কংকাল পাওয়া গেছে। সারি-সারি গণকবরে চাপা দেওয়া হয়েছিল স্বাধীনতাকামী মানুষদের। কিন্তু স্বাধীনতার এই স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় এখনো কোনা উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বহু আগে শুনেছিলাম এখানে স্মৃতিসৌধ হবে। কিন্তু এই স্মৃতিসৌধ এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

সিলেট জেলা গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর বলেন, গালিমপুর, সিলেট ক্যাডেট কলেজ, বারহাল ও বুরুঙ্গা এই চারটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেছে। আমরা হস্তান্তর করে ফেলেছি। কিন্তু লালমাটিয়া বধ্যভূমির জমি এখনো অধিগ্রহণ হয়নি। এখানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে জমি সংক্রান্ত কিছু জটিলতা আছে। অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজ জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে করা হয়। তাই জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে জমি অধিগ্রহণ করে না দিলে আমরাতো কাজ শুরু করতে পারবো না।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.