Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটে শিশু হত্যার ১৩ বছর পর সৎ পিতার যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৪ এপ্রিল, ২০২৪

সিলেট নগরীর বালুচর এলাকায় দেড় বছরের শিশু আলমগীর হত্যার ১৩ বছর পর এই  মামলায় তার সৎ পিতাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রমে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোঃ শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষনা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের পেশকার (বেঞ্চ সহকারী) মোঃ আহম্মদ আলী।

দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম চান মিয়া (৩৫)। তিনি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার ফরিকটিলা ধুপিপাড়ার (বাবুপাড়া) রশিদ আলীর ছেলে। বর্তমানে তিনি সিলেট নগরীর উত্তর বালুচর এলাকার আব্দুল গফফারের কলোনীর বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে দন্ডপ্রাপ্ত আসামী চান মিয়া পলাতক রয়েছেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ঘটনার ১৩ বছর পূর্বে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার পূর্ব তিলাশপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের মেয়ে বিলকিছ বেগমের একই থানার নশুপুর গ্রামের রিকশা চালক মানিক মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে হুসনা বেগম (১০), প্রিয়া বেগম (৬) ও ছেলে আলমগীর (দেড় বছর) এর জন্ম হয়। ঘটনার ৭ মাস পূর্বে বিলকিছ বেগম পূর্বের স্বামীর ৩ সন্তানকে নিয়ে চান মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর চান মিয়া স্ত্রী ও সৎ ৩ সন্তানকে নিয়ে সিলেট নগরীর উত্তর বালুচর এলাকার আব্দুল গফ্ফারের কলোনীতে বসবাস করে আসছিলেন। সন্তানদের অন্যত্র নিয়ে রেখে আসার জন্য বিলকিছ বেগমকে চাপ সৃষ্টি করে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের পাশাপাশি পূর্বের সন্তানদের মারপিট করে আসছিলেন চান মিয়া।

২০১০ সালের ৩১ আগষ্ট শিশু আলমগীর কান্নাকাটি করলে চান মিয়া তাকে মারধর করেন। এর জের ধরে এক পর্যায়ে ওইদিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে চান মিয়া আলমগীরকে সাথে নিয়ে পাশ্ববর্তী  উত্তর বালুচর ২ নং মসজিদের পাশের দোকানে দুধ আনার কথা বলে ঘর থেকে বের হন। পরে চান মিয়া সেখানে না গিয়ে আলমগীরকে শ্বাসরোধে হত্যা করে উত্তর বালুচর আল-ইসলাহ পুরান ক্লাব মাঠে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান। এদিকে মা বিলকিছ বেগম শিশুপুত্র আলমগীরকে না পেয়ে সম্ভব্য সকল স্থানে খোজা-খুজি করতে থাকেন। পরদিন ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টার দিকে উত্তর বালুচর আল-ইসলাহ পুরান ক্লাব মাঠে শিশু আলমগীরের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন।

পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় বিলকিছ বেগম বাদি হয়ে একমাত্র চান মিয়াকে আসামি করে কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ৩ (০১-০৯-২০১০)।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি তৎকালীন কোতোয়ালী থানার এসআই মোঃ আব্দুর রহিম একমাত্র চান মিয়াকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-৩২) দাখিল করেন এবং ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আসামী চান মিয়ার বিরুদ্ধে চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন।

দীর্ঘ শুনানী ও ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) আদালত আসামী চান মিয়াকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোড এর ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনরাশ্রমে কারাদন্ড এবং ২০১ ধারায় ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ২ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ ফখরুল ইসলাম ও আসামীপক্ষে ষ্টেইট ডিফেন্স অ্যাডভোকেট মোঃ আমিনুল ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করেন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.