Sylhet Today 24 PRINT

বন্যায় ফের প্লাবিত জৈন্তাপুর, আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে মানুষ

শোয়েব উদ্দিন, জৈন্তাপুর |  ১৮ জুন, ২০২৪

সিলেটের জৈন্তাপুরে ভারি বৃষ্টিপাতে ফের সারী ও করিচ নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

সোমবার সারা রাতের বৃষ্টিপাতের কারণে মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় সারী নদীর পানি বিপৎসীমার ১২.৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে করিচ ও কাপনা নদীর পানি অতিরিক্ত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জৈন্তাপুর।

শনিবার (১৫ জুন) ভোর রাত থেকে ভারতের মেঘালয় ও বাংলাদেশের সিলেটে ভারি বর্ষণের ফলে জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে ফের পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতে জৈন্তাপুরের নতুন নতুন গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বাড়তে শুরু করায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।

জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০টি পরিবার এরইমধ্যে আশ্রয় নিয়েছে। বসতভিটায় পানি ওঠায় বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার রাত থেকে পরিবার পরিজন ও গৃহপালিত পশু নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে শ্রমজীবী মানুষগুলো। গ্রামীণ সড়ক একের পর এক ডুবছে। হেমু তিনপাড়া সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব সড়কের ওপর দিয়ে তীব্র স্রোত যাচ্ছে। এছাড়া, সোমবার থেকেই প্লাবিত আছে উপজেলার প্রায় অর্ধেকেরও বেশি গ্রাম। ভোগান্তিতে আছে হাজার হাজার মানুষ।

সারি, করিচ, বড়গাং, ও কাপনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার ৬ ইউনিয়নে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে মানুষের ঘরবাড়িসহ ভেসে গেছে হাজারও মৎস্যচাষির স্বপ্ন। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব উপজেলার বাসিন্দারা। দুই উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের বসতভিটায় পানি আসায় মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করায় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানিতে ভেজা বোরো ধান এ ছাড়া আমন ধানের বীজতলা ও শতাধিক মৎস্য খামার পানিতে তলিয়ে গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও তারা পড়েছে বিপদে। বন্যায় কারো ঘরে পানি, কারো দুয়ারে। বন্যায় কবলিত এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে ও অন্যের বাড়িতে। কেউ টং পেতে পরিবার নিয়ে নানা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। অনেকের রাত দিন কাটাতে হচ্ছে নৌকায়। পানি কমার অপেক্ষায় বন্যায় কবলিত মানুষ। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষগুলোর কষ্টের শেষ নেই। তিনবেলা খেতেও পারছেন না অনেকেই।

সরেজমিনে বন্যা কবলিত এলাকা উপজেলা দরবস্ত ইউনিয়নের মহাইল, মুটগুঞ্জা, সেনগ্রাম, গর্দনা, ফরফরা, শুকইনপুর, রনিফৌদ, সাতারখাই। ফতেপুর ইউনিয়নের হেমু ভাটপাড়া, মাঝপাড়া, দত্তপাড়া, বালিপাড়া, নয়াগ্রাম, নয়াগ্রাম দক্ষিণ, ভেলোপাড়া, হরিপুর। জৈন্তাপুর ইউনিয়নের মুক্তাপুর, বিরাইমারা, বিরাইমারা হাওর, লামনীগ্রাম, কাটাখাল, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১ নম্বর লক্ষ্মীপুর, ২ নম্বর লক্ষ্মীপুর, আমবাড়ি, ঝিঙ্গাবাড়ি, নলজুরী হাওর। নিজপাট ইউনিয়নের মেঘলী, বন্দরহাটি, লামাপাড়া, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, মজুমদার পাড়া, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ি, তিলকৈপাড়া, বড়খেল, ফুলবাড়ি, ডিবিরহাওর, ঘিলাতৈল, হেলিরাই। ৩ নম্বর চারিকাটা ইউনিয়নের বালিদাঁড়া, লালাখাল, রামপ্রসাদ, থুবাং, বাউরভাগ উত্তর, বাউরভাগ দক্ষিণ, পুঞ্জিসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তাদের চলাচলের একমাত্র বাহন নৌকা। বন্যায় কবলিত যারা দিনমজুর তাদের কষ্টের শেষ নেই। তিনবেলা তিন মুঠো খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওইসব পরিবারের। অনেকেই রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। বন্যায় প্লাবিত হওয়া এলাকার শিশু-কিশোরদের নিয়েও অনেক কষ্টে রয়েছে তাদের পরিবার।

হেমু ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন বলেন, আমার ঘরসহ আশপাশের আরও কয়েকটি এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমার ঘরের ভেতরে কোমর পানি। যা ছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো আরও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, খুব দুশ্চিন্তায় আছি। ঘরের সব ফেলে রেখে উপরের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে রান্না-বান্না সহ নানা সমস্যায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছি। গরু-ছাগলসহ গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে রয়েছি মহাবিপদে।

আবহাওয়ার একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ নয়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টিপাত কমলে জৈন্তাপুরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। তা না হলে এই বন্যা ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশংকা রয়েছে।

পরিবেশবিদ কবি জোয়াহিদ আহমেদ বলেন, আমার ইউনিয়ন ফতেপুরসহ সিলেটের প্রায় এলাকায় পাহাড় খেকু চক্র টিলা কেটে নদী নালা খাল বিল ভরাট করে দোকানপাট তৈরি করছে এতে করে নদী তার নব্যতা হারাচ্ছে, যার কারণে এই বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। আরেকটি কারণ হাওরের বুক চিরে মাঠামইন অষ্টগ্রাম সড়ক হওয়ায় সিলেটের নদনদীর পানি দ্রুত যেতে পারছে না, যার কারণে সিলেটে ঘন ঘন বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. হাসান পারভেজ রিয়াদ বলেন, সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ১২.৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ে বৃষ্টি থেমে গেলে পানি নিচের দিকে প্রবাহিত হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা ইতোপূর্বে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করছি। উপজেলায় এ পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে মোট ৪৮টি। মানুষের মাঝে ত্রাণ ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। একই সাথে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় সার্বক্ষণিক কাজ করতে প্রস্তুত আছি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.