Sylhet Today 24 PRINT

ঢাকার চেয়েও বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সিলেট

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২২ নভেম্বর, ২০২৫

ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে শুক্রবার (২১ নভেম্বর)। এদিন সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেল অনুযায়ী ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যা কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।

উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশে নরসিংদীর মাধবদীতে হওয়ায় তা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে উৎপত্তি হওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প ছিল এটি। এতে অবকাঠামোগত প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিশুসহ নিহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। আহত আছে কয়েকশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার চাইতেও ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। ডাউকি ফল্টের কারণে এই অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার বলেন, বাংলাদেশকে চারটি ভূমিকম্প জোনে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে সিলেটও রয়েছে। সিলেট যে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে তা বিশেষজ্ঞরা সবসময়ই বলে আসছেন।

আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা বলেন, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা—এ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে বড় বড় ফল্ট আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অঞ্চলে ভূমিকম্পের অন্যতম উৎস হলো- ডাউকি ফল্ট, যেটি শেরপুর থেকে শুরু জাফলং হয়ে ভারতের করিমগঞ্জ থেকে বিস্তৃত। এ কারণে বাংলাদেশ খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ।

তিনি জানান, পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ট আলাদা আলাদা বিট বা প্লেট টেকটোনিক দিয়ে তৈরি হয়েছে, যা নিচের নরম পদার্থের ওপরে ভাসছে। পুরো পৃথিবীতে এরকম বড় সাতটি প্লেট এবং অসংখ্য ছোট ছোট সাব-প্লেট রয়েছে। এগুলো যখন সরে যায় বা নড়াচড়া করতে থাকে বা একটি অন্যদিকে ধাক্কা দিতে থাকে, তখন ভূ-তত্ত্বের মাঝে ইলাস্টিক এনার্জি শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে।

আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা আরও বলেন, সঞ্চিত শক্তি যখন শিলার ধারণ ক্ষমতার পেরিয়ে যায়, তখন সেই শক্তি কোনো বিদ্যমান বা নতুন ফাটল দিয়ে বেরিয়ে আসে। তখন ভূ-পৃষ্ঠে কম্পন তৈরি হয়, সেটাই হচ্ছে ভূমিকম্প।

যেসব স্থানে একটি প্লেট এসে আরেকটি প্লেটের কাছাকাছি মিশেছে বা ধাক্কা দিচ্ছে বা ফাটলের তৈরি হয়েছে, সেটাকে বলা হয় ফল্ট লাইন বলে জানান ফারজানা সুলতানা।

আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন, ভারত, নেপালের অবস্থান ওই তিন ফল্ট লাইনের আশেপাশে। তাই, মিয়ানমারের ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আমরা অনুভব করি। আর যদি সেখানে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তখন আমাদের ওপর সেই প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে। আর ভারত বা নেপালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ওই সম্ভাবনা আরও বেশি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ জাপানের মতো ভূমিকম্পপ্রবণ না। আমরা মডারেটলি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। কিন্তু, সেই অনুযায়ী আমাদের তো প্রস্তুতি নাই। আমাদের বিল্ডিং কোড মানা হয় না।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, গত বছরের শেষ দিকে এবং চলতি বছরের প্রথমে ও মাঝামাঝি সময়ে দেশের আশপাশে বিভিন্ন মাত্রার অর্ধশতাধিক ভূমিকম্প হয়েছে। গত ১৫ বছরে ছোট-বড় ভূমিকম্প হয়েছে দেড় শতাধিক, যা আশঙ্কাজনক।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত পার্বত্য এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে ভারতের মণিপুর, মিজোরাম ও মিয়ানমারের পার্বত্য এলাকাও ঝুঁকির মধ্যে আছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির জানান, ঢাকা এবং এর আশপাশে বিগত কয়েক দশকে সংঘটিত হওয়া ভূমিকম্পের মধ্যে শুক্রবারই সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এর আগে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৪ থেকে ৫ মাত্রার সামান্য বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে এগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের বাইরে। ঐতিহাসিকভাবে এ অঞ্চলে একাধিক বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। যা প্রমাণ করে যে, এটি ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। যেকোনো সময় বাংলাদেশে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে। তবে ঠিক কবে হবে সেটি তারা বলতে পারেন না।

ভূমিকম্প নিয়ে কয়েক দশক ধরে কাজ করেছেন ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, দুটি প্লেট, ইন্দো-বার্মা টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে আজকের ভূমিকম্পটি হয়েছে। কম্পনের তীব্রতা ছিল বেশ। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে তা দেশের পটভূমিতে সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ। শক্তি আটক অবস্থায় ছিল। এর উন্মোচন শুরু হয়েছে। এখন পরবর্তীকালে ফাঁকা দিয়ে আবার ভূমিকম্প হতে পারে।

ভূমিকম্প হওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আগে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ফায়ার সার্ভিসের সিলেটের উপ পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ভূঞা। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের পর আতঙ্ক আর তাড়াহুড়ার কারণে হতাহতের সংখ্যঅ অনেক বেড়ে যায়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
✉ sylhettoday24@gmail.com ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.