নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
সিলেট-৪ আসনে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাথৃী ঘোষণা করেনি বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দাবি, তাকে এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী এই আসনে প্রচার প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন আরিফ।
তবে আরিফের বিরুদ্ধে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আরিফকে ‘বহিরাগত’ দাবি করে এই আসনে ‘স্থানীয়’ কাউকে প্রার্থী করার দাবি জানিয়েছেন তাদের কয়েকজন। এবার তাদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন জামায়াত-এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তারাও এই আসনে ‘স্থানীয়’ কাউকে প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার বিকেলে নির্বাচন নিয়ে সিলেটটুডে’র আয়োজন ‘ভোটের মাঠে’তে অংশ নিয়ে এমন দাবি জানান সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল হাকিম চৌধুরী, জামায়াতের প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদিন, এনসিপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রাশেল উল আলম এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ও দলটির জেলা সভাপতি মুফতি সাঈদ আহমদ।
সিলেটটুডের এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যন ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন, এই আসনে আমাদের মাটির সন্তানকে বড় দল থেকে মনোনয়ন দিতে হবে। মাটির সন্তানই এমপি হতে হবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় লোক হলে এলাকার সবকিছু জানা থাকে। ফলে তার দ্বারা উন্নয়ন সম্ভব হবে। যা বাইরের কারো দ্বারা সম্ভব নয়। বাইরের লোকেরা এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এতোদিন এ আসনে কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি।
এই দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়ে জামায়াতের প্রার্থী ও জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, আমাদের এক নাম্বার পয়েন্ট- আমার এলাকার লোক এমপি হতে হবে। আমাদের দাবি একটাই- আমাদের ভাই, আমাদের এলাকার সন্তান এমপি হতে হবে।
তিনি বলেন, যে দলই হোকন্পিনারা দলকে বলুন, স্থানীয় লোককে মনোনয়ন দিতে, সিলেট-৪ আসনের মানুষ তাকে স্বাগত জানাবো।
জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, আমরা এখানে ৪ জন প্রার্থী আছি। আমরা সবাই ওই এলাকার মানুষ। প্রয়োজনে একজনের সমাবেশে বাকী সবাই গিয়ে হাজির হবো। কারণ আমাদের মধ্যে যে কেউ নির্বাচিত হলে এলাকারই লোকই নির্বাচিত হবে।
জেলা জাময়াতের এই সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশের ভিন্ন একটি ভৌগলিক অঞ্চল, ঐতিহাসিক জৈন্তা রাজ্য বলা হয়, আমরা একটা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। যেটা আর কোনো এলাকায় নেই। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মাথায় বড়ই রেখে লবন খাওয়া হয়েছে। এবার আর খেতে দেবো না।
এনসিপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রাশেল উল আলম বলেন, সিলেট-৪ আসনে এবারের প্রার্থী হতে হবে ‘লোকাল’। সে যে দলেরই হোক। নির্বাচনে যেই জিতুক সে যেনো স্থানীয় হতে হয়। মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।
একই দাবি জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সাঈদ আহমদ বলেন, আমরা লোকাল প্রার্থী চাই। দূরের কেউ প্রার্থী হলে, ভিআইপি বলে সমাজে যারা পরিচিত তারা প্রার্থী হলে সা্ধারণ জনগন তাদের কাছে পায় না। আমরা চাই যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি সবসময় জনগনের পাশে থাকবেন। আপদে বিপদে থাকবেন।
এ ব্যাপারে বুধবার রাতে আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্য জানতে তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে তিনি সিলেটটুডেকে বলেন, আমি এই মাটির সন্তান। ছাত্রজীবন থেকেই আমি সিলেটের রাজনীতিতে সক্রিয়। এখানকার দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধি ছিলাম। ফলে আমাকে বহিরাগত বলা অবান্তর।
তাছাড়া জাতীয় নির্বাচনে স্থানীয় বহিরাগত ইস্যু অপ্রাসঙ্গিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। তারেক রহমানও চাইলে যে কোন আসনে প্রার্থী হতে পারতেন- তাদের কী তখন বহিরাগত বলা হবে?
আরিফুল হক আরও বলেন, দল যাকে যোগ্য মনে করেছে, যার পক্ষে জিতে আসা ও এলাকার উন্নয়ন সম্ভব মনে করেছে তাকেই প্রার্থী করেছে।
প্রসঙ্গত, সিলেট-৪ আসনেবিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেতা হেলাল উদ্দিন এবং সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম।
আর দীর্ঘদিন ধরেই সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। এই আসনের মনোনয়ন পেতে গণসংযোগে মাঠে নেমেছিলেন।
সিলেট-১ আসন না পেলে পুণরায় সিলেট সিটির মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন সাবেক এই মেয়র।
গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। তবে ফাঁকা রাখা হয় ৬৩ টি আসন। দলটি, যার মধ্যে সিলেট-৪ আসন ছিল।
এর দুদিন পর ৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে আরিফুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাসায় তলব করে তাকে সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার বাসায় ওই বৈঠকে ভার্চুয়ালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থিতিতে আরিফুল হককে সিলেট-৪ আসনে দল মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয় বলেও জানান তিনি।