নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা ছিল স্থানীয় বিএনপির একাংশ এবং অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তাদের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী অপরাপর দলের অনেক নেতা। কিন্তু তারপরেও সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর) সংসদীয় আসনে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে আরিফুল হক চৌধুরীকে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও ৩৬ আসনে যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে তাতে রয়েছে আরিফুল হক চৌধুরীর নাম।
এছাড়াও একই সংবাদ সম্মেলনে সিলেট বিভাগের আরও তিনটি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন সুনামগঞ্জ-২ আসনে নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নুরুল ইসলাম ও রেজা কিবরিয়াকে হবিগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী করেছে বিএনপি।
সিলেট-৪ আসনে এর মাধ্যমে দীর্ঘ জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটল।
এদিকে, গত ৩ নভেম্বর প্রথম দফায় মনোনয়ন ঘোষণার পর সিলেট-৪ আসন খালি রেখেছিল বিএনপি। এরপরই ঢাকায় ঘুরে সিলেট গিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী জানান, তাকে সিলেট-৪ আসনে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু দলের অপরাপর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আরিফুল হক চৌধুরীর এই ঘোষণা মানতে নারাজ ছিলেন। তাদের দাবি ছিল দলের পক্ষ থেকে এমন কোন নির্দেশনা তারা পাননি। এনিয়ে তারা প্রকাশ্যে আরিফুল হক চৌধুরীর বিপক্ষে অবস্থান নেন। আরিফকে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে এই আসনে ‘স্থানীয়’ কাউকে প্রার্থী করার দাবি জানান একাধিক প্রার্থী।
কেবল স্থানীয় বিএনপি নেতাদের থেকেই এমন দাবি ওঠেনি। এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন জামায়াত-এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তারাও এই আসনে ‘স্থানীয়’ কাউকে প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার বিকেলে নির্বাচন নিয়ে সিলেটটুডে’র আয়োজন ‘ভোটের মাঠে’তে অংশ নিয়ে এমন দাবি জানান সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল হাকিম চৌধুরী, জামায়াতের প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদিন, এনসিপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রাশেল উল আলম এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ও দলটির জেলা সভাপতি মুফতি সাঈদ আহমদ।
সিলেটটুডের এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যন ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুল হাকিম চৌধুরী বলেন, এই আসনে আমাদের মাটির সন্তানকে বড় দল থেকে মনোনয়ন দিতে হবে। মাটির সন্তানই এমপি হতে হবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় লোক হলে এলাকার সবকিছু জানা থাকে। ফলে তার দ্বারা উন্নয়ন সম্ভব হবে। যা বাইরের কারো দ্বারা সম্ভব নয়। বাইরের লোকেরা এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এতোদিন এ আসনে কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি।
এই দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়ে জামায়াতের প্রার্থী ও জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, আমাদের এক নাম্বার পয়েন্ট- আমার এলাকার লোক এমপি হতে হবে। আমাদের দাবি একটাই- আমাদের ভাই, আমাদের এলাকার সন্তান এমপি হতে হবে।
জয়নাল আবেদীন আরও বলেন, আমরা এখানে ৪ জন প্রার্থী আছি। আমরা সবাই ওই এলাকার মানুষ। প্রয়োজনে একজনের সমাবেশে বাকি সবাই গিয়ে হাজির হবো। কারণ আমাদের মধ্যে যে কেউ নির্বাচিত হলে এলাকারই লোকই নির্বাচিত হবে।
জেলা জাময়াতের এই সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশের ভিন্ন একটি ভৌগলিক অঞ্চল, ঐতিহাসিক জৈন্তা রাজ্য বলা হয়, আমরা একটা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। যেটা আর কোনো এলাকায় নেই। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মাথায় বড়ই রেখে লবন খাওয়া হয়েছে। এবার আর খেতে দেবো না।
এনসিপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রাশেল উল আলম বলেন, সিলেট-৪ আসনে এবারের প্রার্থী হতে হবে ‘লোকাল’। সে যে দলেরই হোক। নির্বাচনে যেই জিতুক সে যেনো স্থানীয় হতে হয়। মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।
একই দাবি জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সাঈদ আহমদ বলেন, আমরা লোকাল প্রার্থী চাই। দূরের কেউ প্রার্থী হলে, ভিআইপি বলে সমাজে যারা পরিচিত তারা প্রার্থী হলে সা্ধারণ জনগন তাদের কাছে পায় না। আমরা চাই যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি সবসময় জনগনের পাশে থাকবেন। আপদে বিপদে থাকবেন।
মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট-৪ আসনে বিএনপির আরও যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন- সকলেই যোগ্য। আমি উপলক্ষ মাত্র, এই মনোনয়ন সবার। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করব।
সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে তিনি সিলেটটুডেকে আরও বলেছিলেন, আমি এই মাটির সন্তান। ছাত্রজীবন থেকেই আমি সিলেটের রাজনীতিতে সক্রিয়। এখানকার দীর্ঘদিনের জনপ্রতিনিধি ছিলাম। ফলে আমাকে বহিরাগত বলা অবান্তর।
তাছাড়া জাতীয় নির্বাচনে স্থানীয় বহিরাগত ইস্যু অপ্রাসঙ্গিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে তিনটি আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। তারেক রহমানও চাইলে যে কোন আসনে প্রার্থী হতে পারতেন- তাদের কী তখন বহিরাগত বলা হবে?
আরিফুল হক আরও বলেন, দল যাকে যোগ্য মনে করেছে, যার পক্ষে জিতে আসা ও এলাকার উন্নয়ন সম্ভব মনে করেছে তাকেই প্রার্থী করেছে।
প্রসঙ্গত, সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য প্রবাসী নেতা হেলাল উদ্দিন এবং সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম।