নিজস্ব প্রতিবেদক | ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬
গত ১৯ জানুয়ারি খুন হয়েছিলেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এসআইইউ) ছাত্রলীগ কর্মী কাজী হাবিবুর রহমান। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই হত্যা করা হয় তাকে। হত্যাকাণ্ডের পরদিনই হাবিবের বড় ভাই বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তবে প্রায় এক মাস পেরোতে চললেও আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ বলছে আসামীদের খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। অথচ এই হত্যা মামলারই এক আসামী সম্প্রতি প্রকাশ্যে নগরীতে ঘটা করে বিয়ে করেছেন। এতে যোগ দিয়েছেন সিলেটের কয়েকজন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাও।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা নাহিদ হাসান ছাত্রলীগ কর্মী কাজী হাবিব হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। ছাত্রলীগের সাগর গ্রুপের কর্মী নাহিদ। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এমবিএ'র ছাত্র, পাশাপাশি একটি বেসরকারি ব্যাংকেও কর্মরত তিনি। হাবিব হত্যার পর নাহিদকে সাময়িক বহিষ্কার করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।
বিয়েতে উপস্থিত থাকা সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কয়েকজন ছাত্র জানান, গত শুক্রবার নগরীর সুবিদবাজারের পল্লবী কমিউনিটি সেন্টারে ঘটা করে বিয়ের আয়োজন করেন নাহিদ। কনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সাবেক সাংসদ শাহিনুর পাশা চৌধুরীর ভাতিজি। এই বিয়েতে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের অনেক নেতারাই উপস্থিত ছিলেন।
বিয়ের একটি ছবিতে দেখা যায় বরের সাথে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিলেট সিটি মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
খুনের আসামীর বিয়েতে উপস্থিত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমি মেয়ে পক্ষের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলাম। বর কে জানতাম না।
তিনি বলেন, বর হত্যা মামলার আসামী জানলে আমি নিজেই পুলিশ ডেকে তাকে ধরিয়ে দিতাম। কালকেই এ ব্যাপারে আমি খোঁজ নেবো।
কামরান বলেন, আমি কোনো সন্ত্রাসী লালন করি না। গ্রুপের রাজনীতি করি না। ফলে খুনি-সন্ত্রাসীরা কখনো আমার কাছে প্রশ্রয় পাবে না।
এ ব্যাপারে সিলেট কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোশারফ হোসেন বলেন, হাবিব হত্যার আসামীদের ধরতে অভিযান চলছে। তবে তাদের খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আসামী নাহিদের বিয়ে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান মোশারফ।
বিয়ে বিষয়ে জানতে নাহিদ হাসানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী কাজি হাবিবুর রহমান হাবিবের উপর হামলা করে নিজ দলের নেতাকর্মীরা। গ্রুপ বদলের কারণেই ক্যাম্পাসের সামনে তার উপর হামলা করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ওই দিনই নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাকে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাবিবের মৃত্যু হয়।
পরদিন বুধবার দুপুরে নিহত হাবিবের ভাই কাজি জাকির হোসেন বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১১জনকে আসামি করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ইলিয়াছ আহমদ পুনম, ইমরান খান, সুবায়ের আহমদ সুহেল, ময়নুল ইসলাম রুমেল, তুহিন আহমদ, নাহিদ হাসান, আওয়াল আহমদ সোহান, আশিক, সায়মন ও নয়ন।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজি হাবিবের হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে ১৫ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার করে। এর আগে ১১ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।