Sylhet Today 24 PRINT

দুবাইয়ের সেরা গৃহকর্মী সুনামগঞ্জের জোসনা

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২১ মার্চ, ২০১৬

মানুষের মৃত্যু হলেও বেঁচে থাকে তার কর্ম। কর্মের ওপর ভর করেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্মরণীয় হয়ে থাকেন। সুনামগঞ্জের গৃহবধূ জোসনা তেমনই এক নারী। যিনি নিজের জীবনের বিনিময়ে রেখে গেছেন মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত। তাও আবার দেশে নয়, প্রবাসে। বলা হয়ে থাকে ‘আত্মত্যাগে বাঙালি’! এটা শুধু আত্মস্বীকৃতি নয়, বরং গোটা বিশ্বে স্বীকৃত। অন্যের বিপদে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়া বাঙালির ভালো গুণগুলোর একটি। এরকমই একটি মহৎ গুণের পরিচয় দিয়েছেন সুনামগঞ্জের গৃহবধূ জোসনা। নিজের জীবনের বিনিময়ে বাঁচিয়েছেন দূর পরদেশ দুবাইয়ের নিষ্পাপ চার শিশুকে।

জোসনার এ আত্মত্যাগের সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। স্বীকৃতিস্বরূপ জোসনাকে সেরা গৃহকর্মী নির্বাচিত করেছে দেশটির সরকার। তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মাধ্যমে জোসনার নিকটাত্মীয়দেরকে অবহিত করার কথা বলা হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার ভাটাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খুরশিদ আলমের স্ত্রী মোছা. জোসনা খুরশিদ মিয়া (সাফিয়া)। যার পাসপোর্ট নম্বর বি-১৫৫৮৮৯৫। তিনি ২০১০ সালের জুন মাসে গৃহকর্মী হিসেবে মেসার্স টিএম ওভারসিসের মাধ্যমে দুবাই যান। সেখানে গিয়ে আল মাদফিনা নামক এক কোম্পানির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ নেন। সে বাড়িতে তাকে গৃহকর্মের পাশাপাশি গৃহকর্তার ছোট সন্তানকে লালন-পালন করতে হতো।

এভাবে চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যে বাড়িতে জোসনা কাজ করতেন, সেই পরিবারের সঙ্গে দুবাইয়ের এক সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে যান। সেখানে গিয়ে ওই মালিকেরসহ চার শিশু সমুদ্রের পানিতে ডুবে যেতে দেখলে জোসনা ঝাঁপিয়ে পড়েন। শিশুদের বাঁচানোর এক পর্যায়ে নিজেই গভীর পানিতে তলিয়ে যেতে থাকেন। পরে ডুবুরিদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করা হলেও সে বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর মারা যান জোসনা।

সূত্র আরো জানায়, এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর জোসনাকে সেরা গৃহকর্মী হিসেবে পুরস্কৃত করে দুবাইয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পুরস্কার হিসেবে তাকে একটি মরণোত্তর মেডেল এবং আর্থিক অনুদান দেয়া হবে। পুরস্কার গ্রহণের জন্য দুবাইয়ের আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে দেশে বসবাসরত কোনো নিকটাত্মীয়কে পুরস্কার গ্রহণের জন্য দ্রুত যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তর ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের সহকারী পরিচালক জাহিদ আনোয়ার জানান, আমাদের বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী গত বছরের ২৯ এপ্রিল জোসনার পরিবারকে আর্থিক অনুদান হিসেবে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়। আর দুবাই থেকে লাশ পরিবহন বাবদ দেয়া হয় ৩৫ হাজার টাকা। পরে আইনানুযায়ী অনুদানকৃত টাকা সমানভাবে তার স্বামী এবং দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়।

তিনি জানান, দুবাই সরকার কর্তৃক তাকে পুরস্কৃত করার ব্যাপারে আমরাও অবহিত হয়েছি। তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণের জন্য তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.