Sylhet Today 24 PRINT

হবিগঞ্জে ছাত্রলীগ-গ্রামবাসী সংঘর্ষের বলি হলো ৩ মাসের শিশু

শাকিলা ববি |  ২১ মার্চ, ২০১৬

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মশাজান গ্রামে বালু উত্তোলন করাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে।

এ সংঘর্ষে ৩ মাসের এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ করেছেন ওই শিশুর অভিভাবকরা। নিহত শিশু তাছপিয়া আক্তার প্রমি নোয়াবাদ গ্রামের আশ্বব আলীর কন্যা। রবিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় বাড়ি ঘরে ব্যাপক হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে বলে জানা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রবিবার রাত ২ টার দিকে কাদিরের স্ত্রী শাহিদা কে আটক করে পুলিশ।

নিহতের পারিবারিক ও পুলিশ সূত্র জানা যায়, মশাজান এলাকায় খোয়াই নদীর বালুমহাল থেকে জেলা ছাত্রলীগ নেতা মুছা আহমেদ রাজুসহ কয়েক নেতাকর্মী কিছুদিন ধরে বালু উত্তোলন করছিলেন। তাদের বালুমহালটি দেখাশোনা করেন পাশ্ববর্তী নোয়াবাদ গ্রামের আমজত আলী।

গত শনিবার বেলা ১১টায় ঐ মহাল থেকে বালু আনার সুবিধার্থে রাস্তার কয়েকটি গাছ কেটে ফেলে বালুমহালের ইজারাদার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে বাধা দেয় মশাজান গ্রামের মন্নর আলী গং। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শনিবার রাতে মন্নর আলীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন আমজত আলী।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রবিবার রাত ৯টার দিকে মন্নর আলীর লোকজন প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন আশ্বব আলীর ঘরে ঢুকে তার শিশুকন্যা তাছপিয়াকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

নিহত শিশু তাছপিয়া আক্তার প্রমির মা আছমা আক্তার জানান প্রতিপক্ষের মন্নর আলী, আব্দুল কাদির, মতি মিয়া, কুটি মিয়া, সোহেল মিয়া, নজরুল ইসলাম গং তার ঘরে ঢুকে হামলা চালায়। এ সময় তারা উত্তেজিত হয়ে তার কাছ থেকে তাছপিয়াকে কেড়ে নিয়ে আছড়ে মাটিতে ফেলে দেয় এসময় একজন শিশুটির গলার মধ্যে পা দিয়ে চাপা দেয়। এতে তাছপিয়ার মৃত্যু হয়।

নিহত তাছপিয়া আক্তারের চাচা আমজত আলী জানান, মন্নর আলী গংদের সাথে বালু উত্তোলন নিয়ে তাদের বিরোধ চলছিল। এ বিরোধের জের ধরে গত দু দিন ধরে মন্নর আলী গং তাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে আসছে। রবিবার রাত ৯টার দিকে মন্নর আলী গং দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে খবর দিলে ওসি নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

আমজত আলী জানান, প্রতিপক্ষের হামলায় তার ভাতিজি তাছপিয়া আক্তার মারা গেছে মন্নর আলী গং পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এ সময় তারা কয়েকটি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে।

এদিকে শিশু তাছপিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে যান হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম, এএসপি মাকসুদুর রহমান মনির এ সময় শিশুটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন পুলিশকে দেখান তার চাচী।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, বালুমহাল নিয়ে দু’দিন ধরে সংঘর্ষ হচ্ছে। রাতেও মূলত বালু উত্তোলনের ঘটনার বিরোধ নিয়েই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তাছপিয়া নামে এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পেয়েছি। তবে ময়না তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না শিশুটি কিভাবে মারা গেছে।

হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসক ডাঃ রাজীব চৌধুরী জানান, ময়না তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না শিশুটি কিভাবে মারা গেছে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি মাথার ভিতরে রক্তক্ষরণের কারণে শিশুটি মারা গেছে।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে এবং লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্নও রয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.