Sylhet Today 24 PRINT

‘ফুট ওভারব্রিজ বিলাস’ : একটিরই ব্যবহার হচ্ছে না, মাঝপথে বন্ধ আরেকটি

দেবব্রত চৌধুরী লিটন |  ১০ মে, ২০১৬

নগরীর কোর্ট পয়েন্টের কালেক্টরেট মসজিদের সামনে নির্মাণ করা হয় ফুট ওভারব্রিজ। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত এ ব্রিজটি গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হওয়ার পর কেটে গেছে ৭মাস; কিন্তু আজো প্রায় অব্যবহৃতই রয়ে গেছে এ ফুট ওভারব্রিজটি।

এ অবস্থায় নগরের সুরমা মার্কেট পয়েন্টে আরেকটি ফুট ওভারব্রিজের নির্মাণ কাজ মাঝপথেই আটকে আছে। আগেরটি ব্যবহার না হওয়ায়  এই স্থানে নতুন ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা পরিষদ।  ফলে ভেস্তে গেছে নির্মাণ কাজে ব্যয় করা প্রায় ৯ লাখ টাকা।

নগরীতে ফুটওভার ব্রিজের প্রয়োজনীয়তা নেই জানিয়ে এসব প্রকল্পকে বিলাসিতা হিসেবে অভিহিত করছেন নাগরিকরা।

সোমবার (৯ মে) বেলা ১১টায় কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম পয়েন্টটি আগের মত ব্যস্ত থাকলেও, পথচারীরা রাস্তা পারাপারে ব্যবহার করছেন না নির্মিত ফুটওভার ব্রিজটি।

কোর্ট পয়েন্টে ফুটওভার ব্রিজটির নির্মাণকালেই এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছিলো। আর নির্মাণের সাত মাস পরও প্রায় অব্যবহৃত অবস্থায়ই পড়ে আছে ফুটওভার ব্রিজটি।

তবে সাম্প্রতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের আগ্রহী করে তুলেন ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়।

এ ব্যাপারে সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মুনির হেলাল সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, যাদের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই দুটি কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, পথচারীরা ব্যবহার করতে আগ্রহী না এমন স্থানে বিলাসবহুল ফুট ওভারব্রিজসহ নানা বিলাসী চিন্তাভাবনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। তাদের উচিত বিলাসিতা ত্যাগ করে নাগরিকদের প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদার অন্যান্য দিকগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া।”

সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিলেট শহরের আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে নগরীর ব্যস্ততম কোর্ট পয়েন্টে ব্রিজটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেসময় গৃহীত চারটি প্রকল্পের মধ্যে কোর্ট পয়েন্ট ফুট ওভারব্রিজটি ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন এর আওতাধীন চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড এ সম্পূর্ণ স্টিল স্ট্রাকচারে আধুনিক নির্মাণ প্রকৌশল ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়, যা পরবর্তীতে কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় এনে স্থাপন করা হয়। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিজটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সিলেটের স্থানীয় সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নূর আজিজুর রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধারণ পথচারীদের সুবিধা ও সড়ক পারাপারে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সিটি কর্পোরেশন এ ফুট ওভারব্রিজটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে কার্যত পথচারীরা ফুট ওভারব্রিজটি ব্যবহার করছেন না, তবে আমরা আশাবাদী, তারা দ্রুতই এ ধরণের ব্রিজ ব্যবহারের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন। এছাড়াও আমরা সড়কের মধ্যে ও ফুটপাথের পাশে গার্ডওয়ালসহ ডিভাইডার নির্মাণ করে পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজের ব্যবহার নিশ্চিত করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছি।”

সিলেটের একমাত্র ফুট ওভারব্রিজটির এ দশার মধ্যেই নগরীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সুরমা পয়েন্টে (জিরো পয়েন্ট) আরেকটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কাজ অসমাপ্ত রেখেই আপাতত স্থগিত করেছে সিলেটের জেলা পরিষদ। অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্তক্রমেই এ ফুট ওভারব্রিজটির কাজ শুরু করার পর তাঁরই মৌখিক নির্দেশে আপাতত কাজ স্থগিত রয়েছে বলে সিলেট জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়।


একই সূত্রে জানা যায়, নির্মিতব্য ফুট ওভারব্রিজটির কাজ দুই ধাপে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। প্রথমে সাব স্ট্রাকচার (সিভিল স্ট্রাকচার) এবং তার উপরে স্টিল দিয়ে নির্মিত সুপার স্ট্রাকচার নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সিভিল স্ট্রাকচারের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় আনুমানিক ১৯ লক্ষ টাকা এবং স্টিল স্ট্রাকচারের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় আনুমানিক ১কোটি ৫৫লক্ষ টাকা। স্টিল স্ট্রাকচারটি চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড এর মাধ্যমে নির্মাণের পরিকল্পনা ছিলো। তবে সিভিল স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হওয়ার আগেই নির্মাণ কাজ স্থগিত করা হয়।

অপর একটি সূত্র জানায়, নগরীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা সুরমা পয়েন্টের ফুটওভার ব্রিজের চেয়ে বেশি থাকায় অর্থমন্ত্রী প্রাথমিকভাবে ব্রিজটির নির্মাণকাজ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

সিলেট জেলা পরিষদের সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাগরিকদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে সুরমা পয়েন্ট (জিরো পয়েন্ট) এ ফুট ওভারব্রিজটির কাজ শুরু করা হলেও পরবর্তী অর্থমন্ত্রী মৌখিক নির্দেশে কাজটি সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সিভিল স্ট্রাকচারের কাজ শেষ হয়েছিলো, তবে পরবর্তী কাজের বিষয়ে এখনো কোন নির্দেশনা না আসায় কাজটি আপাতত স্থগিতই রয়েছে”।

এ পর্যন্ত এই ব্রিজে প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.