Sylhet Today 24 PRINT

ফসলী জমি দখল করে শতাধিক স্টোন ক্রাশার মিল

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ৩০ আগস্ট, ২০১৬

সড়কের দুই পাশে বিস্তৃর্ণ হাওর। ধানী জমি। এসব ধানী জমি দখল করে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য স্টোন ক্রাশার মিল। ক্রাশার মিলের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ধানী জমিতে। আর পাথর ভাঙ্গার ধুলোয় পুরো এলাকা একাকার। ফলে ক্রাশার মিলে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি।

সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল থেকে কোম্পানীগঞ্জ সড়কের দুই পাশে দেখা যাবে এ দৃশ্য। এই সড়কের দুপাশে পাঁচশতাধিক স্টোন ক্রাশার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি ক্রাশার মিল গড়ে ওঠেছে ফসলি জমি দখল করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধোপাগুল থেকে শুরু হয়ে কিছু এলাকা বাদ দিয়ে দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে স্টোন ক্রাশার মিল। আগে সড়কের পাশে পতিত জমিতে স্টোন ক্রাশার মিল গড়ে উঠলেও এবার স্টোন ক্রাশার মিল গড়ে তোলা হচ্ছে সরাসরি ফসলি জমিতে। হাওর এলাকায় পানির উপর গড়ে তোলা হয়েছে ক্রাশার মিল। একদিকে ক্রাশার মিলের বর্জ্যে ভরাট হয়ে পড়ছে অধিকাংশ জমি। অপরদিকে এসব বর্জ্য দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবেই কৌশলে অনেক হাওর ভরাট করে ফেলা হচ্ছে বলে জানালেন ছালিয়া এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, অনেক প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। কাঁচা টাকার কাছে পরাজিত সবাই। পরিবেশ অধিদপ্তর কিভাবে তাদেরকে অনুমতি দেয় সেটাই আমি বুঝতে পারছিনা।

শহর, পৌরসভা, উপজেলা সদর, পৌরসভা, গ্রোথ সেন্টার, হাসপাতাল, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫০০ মিটার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ীর ১০০ মিটার এবং প্রধান সড়ক/মহাসড়কের ৫০ মিটারের মধ্যে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ীর পাশে কোন স্টোন ক্রাশার মেশিন চালু না রাখার উল্লেখ রয়েছে ‘স্টোন ক্রাশিং ক্রাশার মেশিন স্থাপন নীতিমালা ২০০৬’। অথচ এর কোনটিই মানতে নারাজ সিলেটের স্টোন ক্রাশার মিল মালিকরা। তারা মহাসড়কের পাশে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে, ফসলি জমি ভরাট করে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য ক্রাশার মিল। এসব ক্রাশার মিলের কারনে পরিবেশ দূষিত হওয়ার অভিযোগ অনেক আগে থেকেই উঠে আসছে। এবার ফসলি জমি ধ্বংসেরও অভিযোগ ওঠেছে।

সিলেট শহরতলীর লালবাগ এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ মোশারফ হোসেন বলেন, স্টোন ক্রাশার আমাদের ফসলি জমিগুলো গিলে খাচ্ছে। আগে জমিতে অনেক ধান হত এখন আগের মত ধান হয় না। এখন ফসলি জমিতেও নাকে রুমাল চেপে চলাফেরা করতে হয়। আগে হাওর ছিল সেগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে পড়ছে স্টোন ক্রাশার মিলের বর্জ্যে।
স্থানীয় দোকানদার কামরুল ইসলাম, শফিকুর রহমান, আব্দুল মালিক বলেন, ধোপাগুল এলাকা এখন অনেকটা শিল্প এলাকায় পরিনত হয়েছে। ধোপাগুল এলাকার সবখানেই মিল আর মিল। দিন দিন ওই এলাকার ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে মিলের কারনে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এসব মিল জনবহুল ও ফসলি এলাকা থেকে সরিয়ে একটি নির্দিষ্টস্থানে জোন করে পাথর ভাঙ্গা হলে পরিবেশের এমন ক্ষতি হত না। তারা জানান, এখন আগের মত জমিতে ধান হয়না।

সিলেটের বৃহত্তর পাথর কোয়ারি হচ্ছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও বিছনাকান্দি এবং কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারি। এসব কোয়ারির পাথর ভাঙ্গার জন্য সিলেট জুড়ে গড়ে উঠেছে হাজারো স্টোন ক্রাশার মিল। শহরতলী থেকে শুরু করে পাথর কোয়ারি পর্যন্ত গড়ে ওঠা ক্রাশার মিল বিষিয়ে তুলে সিলেটের পরিবেশ।

এ ব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, মালিকরা আইনের ধারে কাছেও নেই। আমি নিজেও দেখেছি অনেক মিল ফসলি জমির উপর গড়ে উঠেছে। তাদেরকে অনেকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা নোটিশ আমলে নেয়নি। এগুলো বন্ধে শিগগির কঠোর অভিযানে নামব।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা বলেন, স্টোন ক্রাশার মিল নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত না হওয়ায় সম্প্রতি পরিবেশের ভয়াবহতা তুলে ধরে সংশ্লিষ্টদের নোটিশ দিয়ে অবগত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এগুলো বন্ধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হলে সিলেটের পরিবেশ বলতে আর কিছু থাকবে না।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সালেহ উদ্দিন বলেন, সিলেটের সকল স্টোন ক্রাশার মিলকে একটি জায়গায় নিয়ে স্টোন ক্রাশার জোন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে এমন যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা মিল বন্ধ হয়ে যাবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.