Sylhet Today 24 PRINT

কী হবে তারাপুর বাগানের অবৈধ ৭১৫টি স্থাপনার?

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ৩১ আগস্ট, ২০১৬

সিলেটের দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগান দখল করে গড়ে উঠা ৭১৫ টি অবৈধ স্থাপনা বুধবার সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেবায়েতকে এই আবাসিক স্থাপনাগুলোর ভূমি বুঝিয়ে দেন।

যদিও গত জানুয়ারিতে উচ্চ আদালতের রায়ে, বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সকল স্থাপনাকে অবৈধ ঘোষণা করে ছয় মাসের মধ্যে এসব অপসারণের কথা বলা হয়েছিলো। অপসারণ না করলে উচ্ছেদের নির্দেশনাও দিয়েছিলেন আপীল বিভাগ। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থাপনাগুলো অপসারণ না করায় উচ্ছেদের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসন। বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নেরও নোটিশ দেওয়া হয়। এসব উদ্যোগের পরও স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে বুধবার স্থাপনাসহ ভূমিই সেবায়েতকে সমঝিয়ে দেওয়া হয়।

এই ৭১৫টি স্থাপনার মধ্যে প্রায় সবগুলোই আবাসিক ভবন। বাগান দখল করে গড়ে ওঠা রাগীব আলীর মালিকানাধীন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেনি প্রশাসন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখনো রাগীব আলীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

উচ্ছেদ না করেই অবৈধ স্থাপনা সেবায়েতকে বুঝিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনায় বলা আছে, সেবায়েত এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবেন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ তাকে সহযোগিতা করবে। সে লক্ষ্যেই সেবায়েতকে স্থাপনার ভ’মিগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হলো।

সেবায়েতকে বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই উচ্ছেদের গণবিজ্ঞপ্তি জারি এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের নোটিশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উচ্ছেদ করতে গেলে তো গ্যাস-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করতেই হবে। তাই আগেই এই নোটিশ দেওয়া হলো।

তবে স্থাপনা উচ্ছেদ না করেই দখল বুঝিয়ে দেওয়াকে উঠকো ঝামেলা বলছেন সেবায়েত পঙ্কজ গুপ্ত। তিনি বলেন, বাগানে স্থাপনা নির্মাণকারীরা সংখ্যায় অনেক এবং প্রভাবশালী। মৌখিকভাবে যদিও আমাকে দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু বাস্তবে দখল নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রায় অসম্ভব। এভাবে দখল দিয়ে আমাকে অনেকটা বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে।  

তিনি বলেন, এখন আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করে আমি স্থাপনা নির্মাণকারীদের অপসারণের নোটিশ প্রদান করবো। এতে কাজ না হলে উচ্ছেদের জন্য আমি জেলা প্রশাসকের সাহায্য চাইবো।

সেবায়েতকে দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বুধবার সকাল ১০টায় তারাপুর চা বাগানে যান সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. মাহবুবুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেনসহ এলাকার লোকজন।  বেলা দেড়টা পর্যন্ত তারা বাগানের বিভিন্ন স্থাপনার ভ’মি পরিদর্শনকে তার দখল সেবায়েত পঙ্কজ গুপ্তকে বুঝিয়ে দেন।

তবে, রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজসহ রাগীব আলীর দখলে থাকা স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে আরেকটি মামলা চলমান থাকায় সেগুলো হস্তান্তর করা হয়নি।   

উল্লেখ্য, প্রতারণার মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকার এই চা বাগান দীর্ঘদিন খল করে রেখেছিলেন ‘কথিত দানবীর’ শিল্পপতি রাগীব আলী। ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গার তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন ব্যবসায়ী রাগীব আলী। এরপর বাগান ধ্বংস করে রাগীব আলী নিজের নামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ৩৩৭ টি প্লট তৈরি করে বিক্রি করে দেন। এসব প্লটে গড়ে উঠে সহস্রাধিক বহুতল আবাসন ও বিপণী বিতান।

গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ তারাপুর চা-বাগান রাগীব আলীর দখল থেকে সেবায়েত পঙ্কজ গুপ্তকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।  গত ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।

রায়ের বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত বলেন, ৭১৫ জনের দখলে থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলো প্রশাসন আজ বুঝিয়ে দেয়। এর আগে খালি জায়গাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। তবে এখন পর্যন্ত রাগীব আলী আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের কোন টাকা দেয়নি। মেডিকেল কলেজসহ তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন তাঁর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাগীব আলী ইতিমধ্যে পালিয়ে চলে গেছে, আশা করি আইন অনুযায়ী এগুলো আদায় করা হবে।  

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.