Sylhet Today 24 PRINT

রাণীগঞ্জ গণহত্যা দিবস পালিত

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি |  ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নরে রাণীগঞ্জ বাজারে ১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর লাইন ধরিয়ে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। পাক হানাদার বাহিনীদের  সহযোগিতা করে দেশীয় রাজাকার চক্র। এসব পাক হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারাতে হয় শতাধিক নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে। তাদের স্মরণে প্রতিবছরের মতো এবারোও বিভিন্ন সংগঠন নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাণীগঞ্জ ফ্রেন্ডস ক্লাব, রাণীগঞ্জ শহীদ গাজী ফাউন্ডেশন ও শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে পৃথক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

রাণীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে রাণীগঞ্জ ফ্রেন্ডস ক্লাবের সভাপতি ছাত্রনেতা মো. আজিজুল ইসলাম রাহুলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা আবুল কাসেম সাগরে পরিচালনায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি আকমল হোসেন, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রানীগঞ্জ বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজী সুন্দর আলী, রাণীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ, রাণীগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিশিকান্ত রায়, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্লাবের দাতা সদস্য ডা. ছদরুল ইসলাম।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ক্লাবের উপদেষ্টা হাজী আব্দুল খালিক, দাতা সদস্য সাবেক মেম্বার মুক্তার মিয়া, মাওলানা নিজাম উদ্দিন জালালী, ছালেহ আহমদ, দিদার আহমদ সুমন, উপদেষ্টা সদস্য রাজীব তালুকদার, প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মহসিন আহমদ, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ছাদিকুর রহমান ছাদিক, কার্যনির্বাহী সদস্য মিঠুন রায় প্রমুখ। এসময় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় নৌবন্দর হিসেবে খ্যাত কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ বাজারে গণহত্যা চালায়। পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পুরো রানীগঞ্জ বাজার।

শ্রীরামসি গণহত্যার পরদিন রানীগঞ্জ বাজারে এ গণহত্যা সংঘটিত হয়। ইতিহাসের বর্বর এই নারকীয় তাণ্ডবে দেড় শতাধিক লোক মারা গেলেও হত্যাযজ্ঞের পর ৩৪ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়। অন্যদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। রানীগঞ্জ বাজারের এই ধ্বংসযজ্ঞের খবর তৎকালীন সময় বিবিসিতে প্রচারিত হয়।

ইতিহাস মতে, ৭১-এর পহেলা সেপ্টেম্বর রানীগঞ্জের সকল ব্যবসায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতা, বড় বড় নৌকার মাঝিসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্থানীয় রাজাকার এহিয়া ও রাজ্জাককে দিয়ে খবর পাঠানো হয় বাজারের রাজ্জাক মিয়ার দোকানে আসতে। এসময় কেউ কেউ ভয়ে পালালেও নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা এবং ঝামেলা এড়ানোর জন্য শতাধিক মানুষ তাদের কথামতো উপস্থিত হন। সকলে জড়ো হবার পর কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় শতাধিক মানুষকে। পরে এদের নিয়ে যাওয়া হয় পাশের কুশিয়ারা নদীর তীরে। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পেছন দিক থেকে গুলি করে রক্তে রঞ্জিত করে দেয় কুশিয়ারা নদীকে। প্রথম গুলিতে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়ায় একাধিকবার লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়।   

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাণীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সরবরাহ করত। বিষয়টি স্থানীয় কিছু রাজাকাররা পাক হানাদারদের জানিয়ে দেয় এবং পরে কিছু রাজাকারদের সহায়তায় পাক হানাদাররা বাজারের নিরীহ ব্যবসায়ী, নৌকার মাঝি, ব্যাপারী,সহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষদের গুলি করে হত্যা করে।   

নিহতদের লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ায় অনেকের লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.