Sylhet Today 24 PRINT

যেনো আয়নাবাজি সিনেমারই বাস্তব রূপ, তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৭ জানুয়ারী, ২০১৭

গতবছরের সবচেয়ে আলোচিত ছবি 'আয়নাবাজি'র রেশ এখনো কাটেনি। সিনেমার এই গল্পই যেনো বাস্তবে রূপ নিলো সিলেটে।

আয়নাবাজি সিনেমায় আয়না চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী যেমন আরেকজনের প্রক্সি দিয়ে টাকার বিনিময়ে জেল খাটেন, সিলেটের রিপন আহমদ ভূট্টোও তেমন। খুনের মামলার সাজাপ্রাপ্ত এক আসামীর প্রক্সি দিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি তিনি।

সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এ ঘটনা তদন্তে সিলেটের মুখ্য বিচারিক হাকিমকে প্রধান করে বিচার বিভাগীয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছন জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাফায়েৎ মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম।

তিন সদস্যের ওই কমিটিতে তদন্ত শেষে তিন কার্য দিবসের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানিয়েছেন এডিএম।

জানা যায়, একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ইকবাল হোসেন বকুলের নামে তিনমাসের জন্য ‘প্রক্সি’ জেল খাটতে গিয়ে ১৪ মাস ধরে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা-ভোগ করছেন রিপন আহমদ ভুট্টো।

রিপন আহমদ ভুট্টো সিলেট নগরীর ৬নং ওয়ার্ডের সৈয়দ মুগনী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও একজন ট্রাক চালক। সিলেট সদর উপজেলার মোগলাগাঁও ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের আলী আকবর সুমন হত্যা মামলার আসামী ইকবাল হোসেন বকুলের নামে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে জেলে রয়েছেন ভুট্টো।

তিনমাসের মধ্যে জামিনে মুক্তি পাবেন, এ ভরসায় বকুলের নামে জেল খাটতে রাজি হয়েছিলেন ভুট্টো। যদিও প্রথমে জানান, সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে কৌশলে বকুল সাজিয়ে জেলে পাঠিয়েছে, তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় অন্য চিত্র।

২০০৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি আলী আকবর সুমন। পরদিন তার পাশের গ্রাম হাউসার পাশের একটি হাওরের কচুরিপানার নিচে থেকে উদ্ধার করা হয় তার মৃতদেহ। এ ঘটনায় নিহত সুমনের ভাই আলী আহসান সুহেল বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলা অনুসন্ধান শেষে পুলিশ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত আসামীরা ছিলেন হাউসা গ্রামের মৃত মছকন্দর আলীর পুত্র দরাছ মিয়া উরফে গয়াছ (৩৪) ও তার স্ত্রী রুজিনা বেগম (৩২) এবং গয়াছের অপর তিন ভাই মকব্বির আলী (৪০), মিরাস আলী (৩৬) আকুছ আলী (৩৮), একই গ্রামের আইয়ুব আলীর পুত্র লোকমান (২৮), আছকির আলীর পুত্র মানিক মিয়া (৪০), আব্দুল মতিনের পুত্র মোঃ ইকবাল হোসেন বকুল (২৬) ও মৃত বোদাই মিয়ার পুত্র আশুক আলী (৩০)।

দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১২ সালের ২০ জুন আলোচিত আলী আকবর সুমন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার দেবনাথ। মামলার চার্জশীট ভুক্ত আসামী ৯ জনের মধ্যে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন সদর উপজেলার হাউসা গ্রামের মৃত মছকন্দর আলীর পুত্র দরাছ মিয়া উরফে গয়াছ (৩৪) ও তার স্ত্রী রুজিনা বেগম (৩২) এবং একই গ্রামের আব্দুল মতিনের পুত্র মো. ইকবাল হোসেন বকুল (২৬)।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন নম্বর আসামী বকুল এর পরিবর্তে প্রক্সি দিতে গিয়ে ১৪ মাস ধরে জেল খাটছেন ভুট্টো। বকুলের নামে ভুট্টো জেল খাটছেন, কারা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে এখন নিশ্চিত থাকলেও আসল সাজাপ্রাপ্ত আসামী বকুল কোথায় এ প্রশ্নের উত্তর জানতে গেলে জানা যায়, ইকবাল হোসেন বকুল এখন সৌদি আরবে। জরুরি প্রয়োজনে দেশে ফেরার দরকার পড়লে ভুট্টোকে বকুল সাজিয়ে আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করেন বকুলের ভাই শিক্ষানবিশ আইনজীবী শামীম আহমদ। তাকে প্রলোভন দিয়ে তিন মাসের মধ্যে জামিনের বের করার কথা থাকলেও ভুট্টো ১৪ মাস ধরেই জেলে।

বকুলের ভাই মকবির আলিও জানান, তার ভাই ইকবাল হোসেন বকুল সৌদি আরবে আছে। ভিসা নবায়নের সময় সে দেশে আসে, এখন আবার সৌদি আরবে চলে গেছে।

বকুলের বদলে কেনো জেলে, এ প্রশ্নের জবাবে ভুট্টো প্রথমে জানান, সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে বকুল হিসেবে আটক করতে আসে, তখন তিনি নিজের নাম ভুট্টো বললেও তারা হত্যার ভয় প্রদর্শন করে তাকে বকুল হিসেবে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করে।

তবে এক পর্যায়ে তিনি জানান, তিন মাসের মধ্যে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়ার প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিলো, কিন্তু ১৪ মাসেও তিনি মুক্তি পাননি।

সিলেট জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জানান, সুমন হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী বকুল ২০১৫ সালের ১১অক্টোবর আত্মসমর্পণ করে, এরপর থেকে সে আদালতের নির্দেশে কারাগারে। আদালতে দাখিল করা ওকালতনামায়ও নাম লেখা ইকবাল হোসেন বকুল, কারা কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত হয়েই ভুট্টোকে বকুল ভেবে কারাগারে রাখেন।

ভুট্টো কারা কর্তৃপক্ষের কাছেও তার নাম ও সাক্ষর বকুল হিসেবে করেছে বলেও জানান সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া। তিনি বলেন, সে কারাগারে আসার সময় প্রথমে তার নাম ইকবাল হোসেন বকুল বললেও এখন সে বলছে তার নাম রিপন আহমদ ভুট্টো। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সূত্র : সময় টিভি, যমুনা টিভি

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.