Sylhet Today 24 PRINT

বড়লেখা হাসপাতালে গর্ভপাত করালেন সেবিকা, মারা গেলেন অন্তঃসত্ত্বা

তপন কুমার দাস, বড়লেখা  |  ১৪ মে, ২০১৭

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা হাসপাতালে গর্ভপাতের সময় মারা গেছেন এক নারী। তিনি ৪ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি না করে অপারেশন থিয়েটার (ওটিতে) গর্ভপাত করানোর সময় তিনি মারা যান।

মারা যাওয়ার নারীর স্বজনদের অভিযোগ, ওই হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার জোহুরা আক্তার ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই গর্ভপাত করান। এতে ওই নারীর মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় উপজেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত নার্সিং সুপারভাইজারকে বাঁচাতে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টারও অভিযোগ ওঠেছে।

মারা যাওয়া নারীর স্বজন, হাসপাতাল ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ৩ সন্তানের জননী লিলা বেগম (৩০) ভাসুরের মেয়েসহ পেটে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যান। এ সময় নার্সিং সুপারভাইজার জোহুরা আক্তারের সাথে কথা বলেন চার মাসের গর্ভবতী ওই নারী। জোহুরা ওই গর্ভবতীর অবস্থা ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট দেখে জানান, তার গর্ভের বাচ্চা মারা গেছে। এটা গর্ভপাত করাতে হলে ৩ হাজার টাকা লাগবে। টাকা ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব হবে না। এরপর ৩ হাজার টাকায় গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নার্সিং সুপারভাইজার গৃহবধূকে হাসপাতালে ভর্তি না করে ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই গর্ভপাতের কাজ শুরু করেন। এর ৫ মিনিটের মধ্যে ওই গৃহবধূ মারা যান বলে অভিযোগ গর্ভবতী গৃহবধূর স্বজনদের।

স্বজনদের অভিযোগ, মৃত্যুর পর তাড়াহুড়ো করে তিনি তার সাথে আসা ভাসুরের মেয়ের কাছ থেকে নাম-ঠিকানা নিয়ে ওই গর্ভবতীকে হাসপাতালে ভর্তি দেখানোর জন্য কাগজপত্র রেডি করে নেন।

মৃত গৃহবধূর ভাসুরের মেয়ে সুহাদা বেগম বলেন, ‘চাচীর পেটে ব্যথা হলে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাই। এর দুই-তিনদিন আগে আমরা নার্স জোহুরা আপার কাছে যাই। তিনি বলেছিলেন ৪ হাজার টাকা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার পরে হাসপাতালে যেতে। তার কথা মত ঘটনার দিন হাসপাতালে গেলে তিনি আমাদের ৩ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান। তখন আমি বলেছিলাম ১ হাজার টাকার কথা। তখন তিনি বলেন, ৩ হাজার টাকা ছাড়া হবে না। পরে আমরা তাকে ৩ হাজার টাকা দিতে রাজি হই। তখন চাচীকে নিয়ে জোহুরা আপা ওটিতে ঢুকেন। এরপর প্রায় ৫ মিনিটের মধ্যে চাচী মারা যান। এর আগে তিনি (জোহুরা আপা) চাচীকে ভর্তি কিংবা বড় ডাক্তারেরও পরামর্শ নেননি। চাচী মারা গেলে তিনি আমার কাছ থেকে চাচীর নাম ও স্বামীর নাম নেন। এরপর পুলিশ, মেম্বার ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আসেন। কিন্তু আমরা এত বড় ঘটনার কোন সঠিক কোন বিচার পাইনি।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নার্সিং সুপারভাইজার জোহুরা তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনেই সব করেছি। তার হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে। টাকার বিনিময়ে তা করিনি। আর এ ধরণের কাজ করলে তো সবাই খুশি হয়ে টাকা দেয়। ওটি রুমে হয়নি এটা হয়েছে লেবার রুমে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমদ হোসেন বলেন, ‘বাচ্চাটি আগেই মারা গেছে। গর্ভপাত বিষয়টা ঠিক নয়। এটাকে ডিএনসি বলা হয়ে থাকে। সব হাসপাতালেই সিস্টাররা এইগুলা করে থাকেন। তিনি (জোহুরা) খুব বেশি ভুল করেননি। তিনি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ। রোগী হার্ট এ্যাটাকে অথবা ভয় পেয়ে মারা যেতে পারে। রোগীকে ভর্তি করেই এটা করা হয়েছে। টাকার বিষয়টি আমি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পেয়েছি। সরকারি হাসপাতালে তিনি এটা করতে পারেন না। এ ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী বলেন, ‘এই ঘটনার অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.