Sylhet Today 24 PRINT

আচরণ সহ্য করতে না পেরে মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে পুলিশে দিলেন বাবা-মা

ওসমানীনগর প্রতিনিধি |  ০২ জুন, ২০১৭

সিলেটের ওসমানীনগরে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে মশিদ মিয়া (২৮) নামে এক মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে পুলিশে দিয়েছেন তাঁর বাবা-মা। মশিদের বাবা-মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে হাত-পা শিকলে বাঁধা অবস্থায় মশিদ মিয়াকে পুলিশ তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার তাজপুর ইউপি'র নটপুর গ্রামের জেলে পল্লীতে ঘটনাটি ঘটে।

ওসমানীনগর থানার এসআই মহিবুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে মশিদ ও তার পরিবারের করুণ কাহিনী শুনে মশিদকে জেল হাজতে প্রেরণের পরিবর্তে নিজে কিছু টাকা দেন ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে আরো কিছু টাকা তুলে চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

এদিকে, মানসিক প্রতিবন্ধী মশিদকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মশিদের কোনো রোগ নেই বলে হাসপাতালে ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেয় বলে জানিয়েছে মশিদের পরিবার ও পুলিশ। হাসপাতালে ভর্তি না করায় বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজারের এক কবিরাজের নিকট নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।

পুলিশ ও মশিদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছর ধরে মারাত্মক মানসিক সমস্যায় ভুগছেন উপজেলার তাজপুর ইউপির নটপুর গ্রামের দরিদ্র অসহায় বৃদ্ধ শফিক মিয়ার একমাত্র ছেলে মশিদ মিয়া। মশিদ নিজের বাবা-মা সহ গ্রামের যাকে সামনে পায় তাকেই মারধর করেন। শফিক মিয়া ছেলে মশিদকে সিলেট শহরে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে দুইবার চিকিৎসা করান এবং গ্রামের কবিরাজ ও হুজুররের কাছ থেকে ঝারফুক ও তাবিজ-কবজ করান।

টাকা-পয়সার অভাবে মশিদকে চিকিৎসা করাতে না পারায় সম্প্রতি মশিদের আচরণ আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠে। গ্রামের যাকেই সামনে পান তাদের আক্রমণ করে বসেন মশিদ। উপায়ান্তর না দেখে আত্মীয়-স্বজন সহ গ্রামবাসীদের সহযোগীতায় শফিক মিয়া ছেলে মশিদকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়িতে শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখে বাবা-মাকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে ওসমানীনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে এদিন সন্ধ্যায় ওসমানীনগর থানার এসআই মহিবুর রহমান বিষয়টি তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে গেলে মশিদকে পুলিশের হেফাজতে দিতে চাওয়ার মূল কারণ উদঘাটন হয়।

মশিদের বৃদ্ধ মা ছৈইদুন বিবি (৫৫) বলেন, ৬ মেয়ে আর একমাত্র ছেলে মশিদ ভাই-বোনদের মধ্যে তৃতীয়। আর্থিক অনটনের মধ্যে মানুষের সাহায্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ঘরে উপযুক্ত আরো তিন মেয়ে রয়েছে। ৬/৭ মাস পূর্বে ছেলে মশিদকেও বিয়ে করিয়েছিলাম, কিন্তু অসুস্থতার কারণে বৌ শিশুপুত্রকে নিয়ে স্বামীক্র ঘর ছেড়ে চলে গেছে। টাকা-পয়সার অভাবে মশিদের চিকিৎসা করাতে পারছি না। মারধরের মাত্রাও ইদানিং বেড়ে যাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে মশিদকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলাম আমরা।

ওসমানীনগর থানার এসআই মুহিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, টাকা-পয়সার অভাবে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে না পেরে পুলিশের নিকট তুলে দিতে চেয়েছিল মশিদের বাবা-মা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.