Sylhet Today 24 PRINT

পাহাড়ি ঢলে জলমগ্ন বড়লেখা পৌর এলাকা

তপন কুমার দাস, বড়লেখা |  ১৮ জুন, ২০১৭

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দুই সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে শহরের বাসাবাড়ি ও দোকানপাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ও দোকানে পানি উঠেছে। প্রায় আট থেকে ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন।

জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (১৭ জুন) রাত ১২টা থেকে বড়লেখা এলাকায় ভারি বর্ষণ হতে থাকে। এতে রোববার (১৮ জুন) সকাল আটটার থেকে পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা পৌর এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বড়লেখা পৌর শহরের হাজীগঞ্জ বাজারের ডাকবাংলো এলাকা থেকে দক্ষিণবাজার মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডের ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার ছাড়া পুরো বাজার এলাকা প্লাবিত হয়। দোকান ঘরে পানি উঠেছে। পৌরসভার প্রায় এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও হাটু পানি থেকে কোমর পানি হয়েছে।

তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজীটেকা, নাজিরের চক, সাইটাল, আইলাপুর, আদিত্যেরমহাল, বাঁশতলা, গ্রামতলা, হাটবন, বারইগ্রাম, নয়াগ্রাম, তেলিগুল, বালুরচর, ভোলাডহর, মুড়িরগুল, পানিধার, পাখিয়ালা, ইয়াকুব নগর, মুছেরগুল এলাকা। এসব এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এদিকে মৌলভীবাজার-কুলাউড়া-বড়লেখা-বারইগ্রাম সড়কের বড়লেখার কাঁঠালতলি থেকে বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়কের বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থান ডুবে গেছে। স্থানীয় লোকজনকে হাটুপানি ঠেলে ঝুঁকি নিয়ে চালচল করতে দেখা গেছে। কিছু লোকজন রিকশাভ্যানে করে যাতায়াত করছেন।

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শহরের পানিধার এলাকায় গণমাধ্যমকর্মী খলিলুর রহমানের মোটর সাইকেল পানির তোড়ে ভেসে যায়। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় মোটর সাইকেলটি পাওয়া যায়। ঢলে বড়লেখা বাজারের প্রায় এক হাজার দোকান এবং চার হাজার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়েছে। অনেক দোকানে ঈদ উপলক্ষে বাড়তি জিনিসপত্র তোলা হয়েছিল। তার অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে চলতি মাসের ৩ জুন এবং গত ৩০ মার্চ বড়লেখা পৌর এলাকা একইভাবে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে।

বড়লেখা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছাদ উদ্দিন রোববার (১৮ জুন) বলেন, ‘পানির অবস্থা খুবই খারাপ। বাজারে আমার দোকানের পেছনে বাসা। বাসাতে পানি উঠেছে। বাজার ও গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়িতে পানি। ঈদের বাজার। মানুষ আসতে পারতেছে না। বেচাকেনা বন্ধ। আজকের পানিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে এবার তিনবার পানি হয়ে গেল। ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে।’

বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী রোববার বলেন, ‘পানির ভয়াবহ অবস্থা। গত (শনিবার) রাত ১২টা থেকে এত বৃষ্টি হয়েছে। সকাল ১০টা পর্যন্তই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। আমার মৌলভীবাজারে যাওয়ার কথা ছিল। বৃষ্টি দেখে বাদ দিয়েছি। ঠিকই শহর প্লাবিত হয়েছে। পৌরসভার কিছু উঁচু বাড়ি ছাড়া প্রায় বাসাবাড়িতেই পানি। বাজারের কিছু জায়গা ছাড়া সারা বাজারই পানির তলে। অন্তত এক হাজার দোকান, চার হাজার বাসাবাড়িতে পানি উঠেছে। পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে পানি নামছে। পানি দ্রুত নামার জন্য একটি রাস্তা কেটে দেওয়া হয়েছে। মূলত ষাটমাছড়া ও নিকড়ি ছড়া এ দুটি ছড়া উপচে পানি এসে শহরে ঢুকে পড়ে।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন রোববার বলেন, ‘শহরে ড্রেনেজ বলতে কিছু নেই। যে কারণে পানি দ্রুত নামতে পারে না। পৌরসভাকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করতে বলা হয়েছে।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.