Sylhet Today 24 PRINT

লিটু হত্যা: পুলিশ বলছে হত্যাকাণ্ড, ছাত্রলীগের দাবি ‘নিজের গুলিতে মৃত্যু’

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৮ জুলাই, ২০১৭

সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শ্রেণিকক্ষে খালেদ আহমদ লিটু নামের এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ও ছাত্রলীগের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ একে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করলেও ছাত্রলীগ দাবি করে বলছে “অবৈধ অস্ত্রের ম্যাগাজিন লোড করতে গিয়ে একটি রুমে অসাবধানতাবশত নিজের গুলিতে নিজেই নিহত হন লিটু”।

এরআগে, ঘটনার দিন দুপুরে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরী সিলেটটুডের সঙ্গে আলাপকালে নিহত লিটুকে নিজেদের সংগঠনের কর্মী হিসেবে দাবি করলেও সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিহতকে ‘বহিরাগত সন্ত্রাসী’ হিসেবেও উল্লেখ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বক্তব্য প্রসঙ্গে ছাত্রলীগ বলছে, “প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা কর্মী দাবি করেছিল, কিন্তু পরে নিশ্চিত হয় নিহত যুবক বহিরাগত।”

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা খলিল উদ্দিন বাদী হয়ে বিয়ানীবাজার থানায় হত্যা মামলা (মামলা নং ১৩) দায়ের করেছেন। মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার ও একটি রিভলভার আর দুটি দা উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের সকলেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।  

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন ফাহাদ আহমদ, কামরান হোসেন, এমদাদ হোসেন, কাওছার আহমদ, দেলোয়ার হোসেন মিষ্টু, শিপু ও সাহেদ। এদের মধ্যে ফাহাদ, কামরান ও এমদাদকে ঘটনার পরই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আটক করে পরে মামলার গ্রেপ্তার হিসেবে দেখানো হয়। অপর আসামী দেলোয়ারকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কেবল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকই না, ছাত্রলীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন ঘটনার পরই নিহত লিটুকে নিজেদের সংগঠনের কর্মী হিসেবে দাবি করেন। এরপর জেলা ছাত্রলীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর তার বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিহত লিটু ছাত্রলীগ কর্মী কি না সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে তথ্যগত ভুল থাকলেও এখন বিষয়টি নিশ্চিত যে সে ছাত্রলীগের কর্মী ছিল না,  সে ওই কলেজে বহিরাগত।”

“তবে তার পরিচয় যাই হোক, একজন মানুষ হিসেবে তার মৃত্যুর কারণটি অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা প্রয়োজন”, বলেন জাকির হোসাইন।

ঘটনার পরের দিন মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেলে পুলিশের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, “এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য ও আলামত বিশ্লেষণে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। তবে আটকৃতদের কাছ থেকে ও বিভিন্ন অনুসন্ধানে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তদন্তের স্বার্থে আপাতত তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।”

পুলিশ আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদঘাটনের একেবারে দ্বারপ্রান্তে রয়েছে এবং অচিরেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য চূড়ান্তভাবে উন্মোচিত হবে বলে দাবি করেন চন্দন কুমার চক্রবর্তী।

তিনি আরও বলেন, “আটক আসামীদের রিমান্ড আবেদন করবো, এদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অস্পষ্ট যে বিষয়গুলো রয়েছে তা আশা করি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এছাড়া ব্যবহৃত অস্ত্র আসলো কোথা থেকে, বা এ ঘটনার অন্তরালে অন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠি জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ।”

ময়না তদন্ত রিপোর্ট ও আসামিদের রিমান্ড শেষেই পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কারণ, কিভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটল, কারা প্রকৃতদায়ী সে সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছবে, বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, সোমবার (১৭ জুলাই) সকালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিবদমান পল্লব ও পাভেল গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর ক্যাম্পাসে পুলিশ অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টার দিকে কলেজের ইংরেজি বিভাগের ১০২ নং কক্ষ থেকে গুলির শব্দ আসলে ওখানে গিয়ে খালেদ আহমদ লিটুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আবুল কাশেম পল্লব বিয়ানীবাজার উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক, এবং পাভেল মাহমুদ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক। নিহত যুবক খালেদ আহমদ লিটু একজন মোবাইল দোকানদার হিসেবে ছাত্রলীগ দাবি করলেও সংগঠনটির  বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন, হত্যা মামলার আসামি এবং গ্রেপ্তার হওয়া সকলেই পাভেল গ্রুপের নেতাকর্মী।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.