Sylhet Today 24 PRINT

খর্বকায় ও স্বল্প ওজনের শিশুর হার সবচেয়ে বেশি সিলেটে

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ১৩ আগস্ট, ২০১৭

সবচেয়ে উৎপাদনশীল জলাভূমি হাওরের বড় অংশ সিলেট বিভাগে। বছরের সাত-আট মাস পানিবন্দি থাকতে হয় হাওড়পাড়ের মানুষকে। প্রতি বছরই থাকে ফসলহানির শঙ্কা। ফসল হারালে ন্যূনতম খাদ্য চাহিদাও পূরণ করতে পারে না তারা। দেশের চা বাগানেরও বড় অংশের অবস্থান এ বিভাগেই। চা শিল্প দেশের অর্থনীতিতে লক্ষণীয় অবদানও রাখলেও শ্রমিকরা থাকছেন অলক্ষ্যেই। এখনো দৈনিক ৮৪ টাকা মজুরিতেই কাজ করতে হচ্ছে তাদের।

হাওরবাসীর মতো তাদেরকেও নিরন্তর অপুষ্টিতে ভুগতে হচ্ছে। তাদের সন্তানরা বড় হচ্ছে কম উচ্চতা ও স্বল্প ওজন নিয়ে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যও বলছে, বিভাগভিত্তিক স্বল্প ওজনের শিশুর হার সবচেয়ে বেশি সিলেটে। বিভাগটির গ্রামাঞ্চলে পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩০ শতাংশ শিশু স্বল্প ওজন নিয়ে বেড়ে উঠছে। শহরাঞ্চলের শিশুদের মধ্যে এ হার ৭ শতাংশ। জাতীয়ভাবে এ হার গ্রামাঞ্চলে ২১ ও শহরাঞ্চলে ১০ শতাংশ।

খর্বকায় শিশুর হারও সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, অপুষ্টির কারণে বিভাগটির গ্রামাঞ্চলে ৩২ শতাংশ শিশুর বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম। শহরাঞ্চলে এ হার অনেকটাই কম ১৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে বিভাগটির ৫০ শতাংশ শিশু খর্বকায়। জাতীয়ভাবে এ হার ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ২৬ ও শহরাঞ্চলে ৯ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত তারা। দারিদ্র্যের কারণে শিশুদের পুষ্টির জোগান দেয়া সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে। পাশাপাশি চা বাগানগুলোর শ্রমিকরা যে মজুরি পান, তা দিয়েও সন্তানদের পুষ্টিকর খাবার তুলে দেয়ার সামর্থ্য থাকে না তাদের। একই অবস্থা বিভাগের শহর ও গ্রামের অন্য দরিদ্র পরিবারগুলোরও।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হীরালাল দেব বলেন, জন্মের প্রথম ছয় মাসে শিশুর ওজন প্রায় দ্বিগুণ হয়। ছয় মাসে উচ্চতা চার ইঞ্চি বাড়লে ওজন দুই থেকে চার কেজিতে উন্নীত হয়। এক বছর বয়সে ওজন হয় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কেজি। এ সময় উচ্চতা আরো চার ইঞ্চির মতো বাড়ে। এভাবে ওজন ও উচ্চতা বাড়তে থাকে। স্বাভাবিক এ বৃদ্ধি ব্যাহত হলে বুঝতে হবে শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। গ্রামের পাশাপাশি শহুরে শিশুদের মধ্যেও এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

হীরালাল বলেন, দারিদ্রতার পাশাপাশি অনেকক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সচেতনতার অভাবেও শিশু ওজনস্বল্প ও খর্বখায় হয়ে পড়ে। শহুরে শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা যায়।
ছয় মাস পর্যন্ত শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াতে মায়েদের অনীহা, শিশু পুষ্ঠি সম্পর্কে ধারণা না থাকা ও সুষম খাদ্যের অভাবের ফলে এমনটি হয়ে থাকে। দারিদ্রতা ও অজ্ঞনতাই এই সমস্যার মূলে বলে মন্তব্য তার।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের ১৬২টি চা বাগানে নিবন্ধিত শ্রমিক রয়েছেন ৮৯ হাজার ৮১২ জন। এর বাইরে অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা আরো ১৯ হাজার ৫৯২। অস্থায়ী শ্রমিকরা রেশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড পান না। বসবাসের জন্য ১৬ হাজার পাকাঘর বরাদ্দ আছে নিবন্ধিত শ্রমিকদের জন্য। এছাড়া প্রায় ৪৫ হাজার শ্রমিকের জন্য রয়েছে কাঁচাঘর। নিবন্ধিত ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিকের কোনো বাসস্থান নেই।

চা শ্রমিকদের মতোই অবস্থা হাওরপারের বাসিন্দাদেরও। সুনামগঞ্জের সিভির সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ আট মাস পানিবন্দি থাকে। এই সময়ে শাকসবজি জাতীয় খাবার থেকে বঞ্চিত থাকে তারা। আর দারিদ্রতার কারণে অন্যান্য সময়ও শিশুদের পুষ্টির জোগান দিতে পারে না তারা।

তিনি বলেন, জেলার শাল্লা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুরসহ যেসব এলাকার অতিদরদ্র ও একেবারে এক ফসলের উপর নির্ভশীল তাদের পরিবারের শিশুদের ওজন স্বল্পতা ও বেঁটে হওয়ার হার বেশি।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পুষ্ঠিহীনতা দূর করতে হাওর এলাকায় সম্পূরক খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এনজিওগুলো এ ব্যাপারে কাজ করছে। কিন্তু এখানকার দরিদ্র অভিভাবকরা এগুলো গ্রহণ করতে চান না। এমনকি শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলেও তারা তা করতে চান না। হাসপাতালে এক সপ্তাহে থাকলে পরিবারের সবাইকে উপোস থঅকতে হবে এমনটি মনে করেন তারা। ফলে সুনামগঞ্জের মা ও শিশুরা ব্যাপকভাবে পুষ্টিহীনতায় ভূগছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, স্বল্প ওজনের শিশুর হার সিলেটের পর সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগে। বিভাগটির গ্রামাঞ্চলে ২৭ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে ৮ শতাংশ শিশু খর্বকায় হয়ে বড় হচ্ছে। এছাড়া রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলে এ হার ২৫ ও শহরাঞ্চলে ৫, চট্টগ্রামে গ্রামাঞ্চলে ২৪ ও শহরাঞ্চলে ৮, খুলনার গ্রামাঞ্চলে ২১ ও শহরাঞ্চলে ৫, বরিশালে গ্রামাঞ্চলে ২৪ ও শহরাঞ্চলে ৭ এবং ঢাকার গ্রামাঞ্চলে ২১ ও শহরাঞ্চলে ৫ শতাংশ।

খর্বকায় শিশুর হারও সিলেটের পর সবচেয়ে বেশি রংপুরে। বিভাগটির গ্রামাঞ্চলের শিশুদের ২৮ শতাংশ ও শহরাঞ্চলের ১০ শতাংশ শিশু খর্বাকার। এছাড়া রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলে ২৬ ও শহরাঞ্চলে ৯, খুলনার গ্রামাঞ্চলে ২৬ ও শহরাঞ্চলে ৭, চট্টগ্রামের গ্রামাঞ্চলে ২৫ ও শহরাঞ্চলে ১২, ঢাকার গ্রামাঞ্চলে ২৪ ও শহরাঞ্চলে ৭ এবং বরিশালের শহরাঞ্চলে ২৫ ও গ্রামাঞ্চলে ১০ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, স্বল্প ওজন ও খর্বকায়ের পাশাপাশি শীর্ণকায় শিশুর হারেও সবার উপরে সিলেট বিভাগ। বিভাগটিতে এ হার ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলের ১৩ শতাংশ ও শহরাঞ্চলের ২ শতাংশ শিশু শীর্ণকায়।

সূত্র : বণিক বার্তা

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.