Sylhet Today 24 PRINT

বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে প্রতিমা নির্মাণে ব্যস্ত সিলেটের মৃৎশিল্পীরা

দেবকল্যাণ ধর বাপন |  ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ছবি: কমলজিৎ শাওন

আর ক'দিন পরেই শুরু হবে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। এ পূজার প্রতিমা নির্মানে ব্যস্ত সময় পার করেছেন সিলেটের মৃৎশিল্পীরা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা।

শরৎ চলে এলেও এখনো সিলেটে বৃষ্টি থামেনি। চলছে রোদ-বৃষ্টির খেলা। আবহাওয়ার এই বিরুপতার মধ্যদিয়েই চলছে সিলেটের মৃৎশিল্পী-কারিগরদের প্রতিমা নির্মান।

আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী পূজা থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে বেজে উঠবে ঢাকঢোল আর কাঁসার শব্দ। পাঁচ দিনের উৎসবের পর ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিমা বিসর্জনের পর ঘটবে এর সমাপ্তি।

তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে মহালয়ার দিন থেকে দেবীর আগমনী উৎসব শুরু হয়। আর এবারের মহালয়া ১৯ সেপ্টেম্বর।

সিলেটের মৃৎপল্লীগুলো ঘুরে দেখা যায়, কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে গড়ে তোলা দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন পাল পাড়ায় পুরুষের পাশাপাশি নারী প্রতিমা কারিগররা। তবে এবার অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় ৩/৪ মাস আগে থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করে মৃৎশিল্পীরা।

সিলেট নগরীর পাল পাড়া নামে খ্যাত দাড়িয়াপাড়া গিয়ে দেখা যায়, মাটির কাঠামো নির্মানের পর রংয়ের কাজ শুরু করেছেন শিল্পীরা। তবে মৃৎশিল্পীরা জানান, বৃষ্টি এবং মেঘলা আবহাওয়ার জন্য প্রতিমা শুকাতে না পেরে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের।

তারা বলেন, টানা বৃষ্টি গেল কয়েকদিন। এরপর মেঘলা আবহাওয়া। আবহাওয়ার উন্নতি না হলে তা আমাদের জন্য অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

২-১ দিনের মধ্যেই প্রতিমার গায়ে পড়বে রঙের আঁচড়।  রঙ-তুলির শৈল্পিক আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হবে দেবীর মনকাড়া প্রতিচ্ছবি। তাই যেনো ঘুম নেই পাল বাড়িতে। মনের আনন্দে ভক্তির সঙ্গে চলছে প্রতিমা পার্বণের প্রস্তুতি।

দাড়িয়াপাড়ার মৃৎশিল্পী শঙ্কর পাল জানান, সকাল থেকে রোদ ঝলমলে পরিবেশ থাকায় আমাদের অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। কিন্তু দুপুরের পর ফের কয়েক পশলা বৃষ্টিতে কিছুটা সমস্যায় হয় বলে জানান তিনি। একবার করে মাটি দেয়া হয়ে গেছে। রোদে প্রতিমা শুকিয়ে গেলে আবার এর উপর মাটি দেয়া দেবো। কিন্তু এবারের মুল সমস্যা সয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি।

এভাবে ৩ বার মাটি দিয়ে শুকানোর পর তুলি দিয়ে রং করা হয়। তারপর প্রতিমাগুলোকে বিভিন্ন অলংকার দিয়ে সাজিয়ে বিভিন্ন সংঘের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার মতো করে উপযোগী করা হয়।

সরেজমিনে সিলেটের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এখন দিন-রাত প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পী ও কারিগররা।

কয়েকজন মৃৎশিল্পী জানান, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে এখন অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে আগামী দুই একদিনের মধ্যে প্রতিমায় রংয়ের কাজ ধরা হবে । এর পর প্রতিমায় পোশাক আর অলংকার পরিয়ে করা হবে দৃষ্টিনন্দন। তবে পূজা প্রস্তুতির শেষ বেলায় ঘরে বসে নেই কারুশিল্পীরাও। প্রতিটি পূজা মণ্ডপকে পূর্ণাঙ্গ শৈল্পিক রূপ দিতে কারুশিল্পীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন।

মাছুদিঘিরপার অবস্থিত ত্রিনয়নী সার্বজনীন পূজা কমটির প্রতিমা তৈরির কারিগর মৃৎশিল্পী হনু পাল বলেন, গত তিন বছর থেকে এখানে মূর্তি তৈরি করি। প্রতিমা তৈরি করে এখন আর আগের মত আয় হয় না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনি প্রতিমার দাম। তার ওপর আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় সমস্যা আরও বেড়েছে।

লামাবাজারের তিন মন্দিরের প্রতিমা তৈরির কারিগর মৃৎশিল্পী সাগর পাল বলেন, এই কাজ করে কর্মচারীর বেতন ঠিক মতো হয় না। যেসব জিনিস দরকার সেইগুলোর দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে কর্মচারীরও দাম বেড়েছে। কাজ শেষে যে টাকা পাই তখন গিয়ে আয় ও ব্যয় অনেক সময় প্রায় সমান হয়ে যায়। বাপ-দাদাদের কাছ থেকে শেখা এই কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছি। এখন এই কাজও ছাড়তে পারি না।

তিনি আরো বলেন, এবছর আমরা ৯টা কাজ পেয়েছি, যার মধ্যে সিলেটে ৬টা, ছাতক, শ্রীমঙ্গল ও ঢাকায় ১টা করে প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছেন। সবগুলো প্রতিমা এখন শুকানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে সব প্রতিমাগুলোতে প্রাথমিক রঙের কাজ  শুরু করবো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.