Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটে আবারও চুরির অভিযোগে কিশোরকে নির্যাতন: আটক ১, তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৬ নভেম্বর, ২০১৭

দেশজুড়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করা শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার ঘটনা এখনো নাড়া দেয় মানুষকে। এই নিার্যাতনের মতো আরেকটি বর্বোরিচত ঘটনা ঘটেছে। সিলেটে। আরেক কিশোরকে চুরি অপবাদে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে।  নির্যাতনের পর মাদক মামলায় পুলিশের হাতদে তুলে দেওয়া হয়েছে সেই কিশোরকে।

গত ২৯ অক্টোবর সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার মানাউড়া পূর্বপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের একাধিক ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কিশোরটি বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে।

এঘটনায় সোমবার প্রধান অভিযুক্ত ওই এলাকার ইসবর আলীকে (৬৫) আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু হাসনাত খানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান। এই কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার।

নির্যাতিত কিশোরের পরিবারের অভিযোগ, নির্যাতন ঢাকতে ছেলেটির বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেছেন পুলিশের এক সদস্য।

১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, মাটিতে পড়ে আছে এক কিশোর। দুই হাত ও পা একত্র করে গাছের সঙ্গে বাঁধা। চারপাশে কৌতূহলী মানুষের জট। একজন বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ছেলেটিকে পেটাচ্ছেন। যন্ত্রণায় চিৎকার করছে ছেলেটি। পিটুনির পর কান ধরে উঠবস করিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

নির্যাতনের শিকার এই কিশোরের বাবা মারা গেছেন ২০০৯ সালে। মা আছেন। ছয় ভাই ও এক বোনের পরিবারে সে তৃতীয়। বড় ভাই সিলেট মহানগরের টিলাগড়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। সে পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক।

কিশোরের মা'র দাবি, তার ছেলে চোর নয়। ঘটনার দিন সকালে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে পেটানো হয়। নির্যাতনকারীরা তার গ্রামেরই লোক। গত বছরের ১১ মে গ্রামে তার গরু চুরির ঘটনায় এক পক্ষের বিরুদ্ধে থানায় তিনি (মা) লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষ নিয়ে তার ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চোর হিসেবে তাকে বেঁধে রাখার প্রমাণ রাখতেই ভিডিওটি নির্যাতনকারীরা ধারণ করেন। পরে তারাই গ্রামে ছড়িয়ে দেন। ঘটনাটি আজিজুরের বাড়ির সামনে ঘটেছে। আবদুল্লাহ ও আজিজুর গ্রামের মুরব্বি হিসেবে ইসবর আলীর হাতে কঞ্চি তুলে দিয়ে ‘বিচার’ করার কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা তাকে বেঁধে রাখা হয়।

সালুটিকর পুলিশ তদন্ত ফাঁড়ি সূত্র বলেছে, ছেলেটির বিরুদ্ধে মাদক আইনে করা মামলার বাদী ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক সুশংকর পাল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক পীযূষ কান্তি দাস।

এজাহার অনুযায়ী, ওই দিন (২৯ অক্টোবর) একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ‘ইয়াবা বড়ি’ বিক্রির সময় তাকে পুলিশ ১২টি ইয়াবাবড়িসহ আটক করে। ৩০ অক্টোবর থেকে কিশোর ছেলেটি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছে।

এব্যাপারে মামলার বাদী ও সালুটিকর থানার ইনচার্জ এসআই সু শংকর পাল বলেন, ঘটনার দিন স্থানীয় কয়েকজন ইয়াবাসহ তাকে ধরে পুলিশে দেন। এলাকাবাসী সাক্ষী হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। তবে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান।

২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটে চুরির অভিযোগে শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট খুলনায় হত্যা করা হয় রাকিব (১২) নামের শিশুকে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পানির পাম্প চুরির অভিযোগে ময়মনসিংহে সাগর (১৬) নামের এক কিশোরকে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ল্যাপটপে গেম মুছে ফেলার অভিযোগে চার বছরের এক শিশু ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে মোবাইল চুরির অভিযোগে এক কিশোর নির্যাতনের শিকার হয়।সর্বশেষ শনিবার সন্ধ্যায় চুরির অপবাদ দিয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় নয়ন মিয়া (১২) নামের এক শিশুর হাতে সুই ঢুকিয়ে ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.