Sylhet Today 24 PRINT

সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের ‘মজার স্কুল’

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি |  ১৭ এপ্রিল, ২০১৮

মজার স্কুল। নামের সাথেই জড়িয়ে আছে আনন্দ আর সেই আনন্দের পরশেই বদলে যাচ্ছে পথশিশুদের জীবন।

মজার স্কুলের শিক্ষার্থী কল্পনা, রিয়াজ, বাবু, শ্রাবণ, লিজা শ্রীমঙ্গলের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু। কারো বাবা-মা আছে কারো নেই। সারা দিন ঘুরে ঘুরে কাগজ বা ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করা তাদের কাজ। তাদের একজন পথশিশু ড্যান্ডি। আগে নেশা করত, তার মত ভয়ানক নেশায় আসক্ত হয়েছে আরো শিশু। এদেরকে শিক্ষার আলো দিয়ে সুন্দর জীবনে ফেরানোর জন্য কয়েকজন তরুণের ব্যক্তিগত উদ্যোগে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চালু করা হয়েছে 'মজার স্কুল'।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন খোলা মাঠে পলিথিন বিছিয়ে করানো হয় ক্লাস। এখানে যারা পড়তে আসে তারা অন্যসব স্কুলের মত নিয়মকানুন মেনে চলে না। মেনে চলে না সাধারণ শিক্ষা পদ্ধতিও। ব্যতিক্রমধর্মী এই স্কুলে শিক্ষা দেয়া হয় মজার ছলে। গল্প, গান, বিভিন্ন রকম মজার খেলার মাধ্যমে তাদের আকর্ষণ করা হয় পড়াশুনার প্রতি। স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, গণনা ইত্যাদি এখন সবারই মুখস্ত, লিখতেও পারে তারা।

প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তাদের ক্লাস করানো হয়। ক্লাসে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ক্লাস শেষে তাদের নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়। স্কুলটি ২০১২ সালে চালু হয় ২০১৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। আবার ২০১৭ সালে চালু হয়।

এই পথশিশুদের প্রধান কাজ রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়ানো। তারা বসবাস করে শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন ও বিভিন্ন বস্তিতে। এই পথশিশুরা সারা দিন কাগজ কুড়ায়, ভিক্ষাবৃত্তি করে এবং ড্যান্ডির মতো ভয়ানক নেশা গ্রহণ করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সাথে জড়িয়ে পড়ে। দারিদ্র্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে অবহেলা, অযত্ন আর অনাদরে বেড়ে ওঠা পথশিশুরা নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ায় তাদের ফেরানোর জন্য কয়েকজন উদ্যমী তরুণের ভাবনায় চালু করা হয় এই মজার স্কুল। এই অবহেলিত পথশিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে গড়ে তুলতে শ্রীমঙ্গলে কাজ করে যাচ্ছে ‘মজার স্কুল’।

শিক্ষক পিংকি দাশ, আর্য দেবব্রত, কেয়া পাল এখানে ক্লাস করানোর অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, প্রথম প্রথম তারা খুবই উশৃঙ্খল ছিল। ক্লাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ করাই ছিল প্রথমে বড় চ্যালেঞ্জ। এই শিশুদের পড়াশুনা করানোটা অন্য বাচ্চাদের চেয়ে কঠিন। তবে বহু দিনের প্রচেষ্টায় এবং নিজেদের প্রয়োগকৃত কিছু পদ্ধতির কারণে এখন তারা শান্ত হয়েই ক্লাস করছে।

মজার স্কুলে বাবু, শ্রাবণ, লিজাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেল, তারা এখন স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, গণনা সবারই মুখস্ত বলতে ও লিখতে পারে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসের নাম এবং কারণ তারা এখন জানে। যে যেখানেই থাকে না কেন ক্লাসের সময় হলে তারা চলে আসে।

স্কুলের সমন্বয়কারী তাপস দাশ জানান, স্কুলটি ২০১২ সালে চালু হয়। এই পথশিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি পরিহার, মাদক ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। মজার স্কুলে এসে তারা অনেক কিছু শিখতে পেরেছে। আমাদের যদি একটা ভাল ক্লাসরুম, প্রজেক্টর ইত্যাদি সরঞ্জাম থাকতো তাহলে তাদেরকে আরো সহজে ভালোভাবে পড়ানো যেত।

তিনি আরো জানান, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করে তাদের দিনগুলো সম্পর্কে বুঝানোর চেষ্টা করি।

মজার স্কুলের তত্ত্বাবধানে থাকা শ্রীমঙ্গল দ্বারিকাপাল মহিলা কলেজের প্রভাষক জলি পাল জানান, আমরা চেষ্টা করছি এই পথশিশুদের একটু ভালোভাবে গড়ে তুলার। স্কুলের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের সীমিত চাঁদায় স্কুল চালানো কষ্ট হচ্ছে। বৃত্তবানদের প্রতি সহযোগিতার আহবান জানান তাঁরা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবাশশেরুল ইসলাম জানান, উদ্যোগটা ভালো। এই শিক্ষার্থীদের যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো যায় তাহলে ভালো হয় এবং এজন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.