Sylhet Today 24 PRINT

পা দিয়ে লিখেই জিপিএ-৫

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৮ মে, ২০১৮

শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না শেখ আজিজুল হক মুন্না। লিখেও পা দিয়ে। তাতে কী! এই সীমাবদ্ধতা দমাতে পারেনি মুন্নাকে। এই অদম্য তরুণ এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।

মুন্না দক্ষিণ সুরমার সৈয়দ কুতুব জালাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। দক্ষিণ সরমা উপজেলার গাজীরপাড়া হাফিজিয়া আলিম মাদরাসার শিক্ষক ফজলুল হক বুলবুল ও সৈয়দ কুতুব জালাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পাপিয়া খানমের ছেলে মুন্না । জন্ম থেকেই তার হাত দুটি অন্যদের চেয়ে আলাদা।

তাদের মূল বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার উত্তর বংশিকুন্ডা ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামে। তবে বর্তমানে তারা উপজেলার খালোমুখ এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

ছেলের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাবা ফজলুল হক। তিনি বলেন, জন্মের পর থেকেই মুন্নার দুই হাতের কনুই ও কব্জি কাজ করে না। বয়স বাড়ার সাথে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দেখা দেয়। পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নিলেও কিছু জটিলতার কারণে আর করা হয়নি। এ নিয়ে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। সর্বশেষ তাকে মাদ্রাজে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ফজলুল হক আরও জানান, মুন্নাকে স্কুলে ভর্তি করার পর হাত দিয়ে লেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দুই হাত অকেজো হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। তবে বসে থাকেনি মুন্না। হাতের সহযোগিতায় (হাতে কলম ধরে) পা দিয়ে লেখার চেষ্টা শুরু করে সে।

পরে বা হাতে কলম ধরে পা দিয়ে লিখতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এ অবস্থায় শুরু হয় তার পথচলা।

ফজলুল হক বলেন, প্রথম শ্রেণি থেকে সকল শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে মুন্না। ২০১২ সালে পূর্বভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি)-তে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৫ সালে সৈয়দ কুতুব জালাল মডেল হাইস্কুল থেকে জেএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করে সে। এবার এসএসসিতে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসিতে ১০৫ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

ফজলুল হক জানান, হাতের সমস্যা ছাড়া মুন্নার আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সে সরকারি-বেসরকারি ১১টি বৃত্তি-উপবৃত্তি পেয়েছে।

নিজের সাফল্য প্রসঙ্গে মুন্না জানায়, আমার বাবা-মা আমাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও শ্রেণিকক্ষে বন্ধুদের সহযোগিতার কারণে আমার লেখাপড়া আরও সহজ হয়েছে।

সৈয়দ কুতুব জালাল মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল করিম বলেন, মুন্না সবকিছুতেই ভালো। শ্রেণিকক্ষের বাইরেও তার কার্যক্রমে আমরা সবাই সন্তুষ্ট। সে বিজ্ঞান বিষয়ক সেমিনার, গণিত অলিম্পিয়াড ও বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খুব মনযোগী।

তিনি বলেন, তার পরীক্ষা কেন্দ্র অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয়েও তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার মেধার কারণে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়নি।

তিনি আরও বলেন, মুন্নাকে রোটারি ক্লাব অব সিলেটের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা উদ্দীপনা দেওয়া হয়েছে। এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল ব্যয়ভার বহন করার আশ্বাস দেন তারা।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.