Sylhet Today 24 PRINT

ভারত-বাংলাদেশ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, প্লাবিত ৭০ টি গ্রাম

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি |  ১৩ জুন, ২০১৮

টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানি বেড়ে মৌলভীবাজারের মনু নদী বিপদসীমার ১৭৭ সে.মি এবং ধলাই নদী ৫৩ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। কুলাউড়ার চাতলা চেক পোষ্ট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে দুই দেশে যাতায়াতকারী অনেক যাত্রীকে আটকা পড়তে দেখা যায়।

মনু নদীর চাতলায় একটি কালভার্টের একাংশ ধেবে যাওয়ায় বুধবার দুপুর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে দুই দেশের কোন যাত্রীও যাতায়াত করতে পারেনি।

ঢলের পানিতে চাতলা সেতুর উত্তর দিকে কয়েক মাস আগে নির্মিত প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ঢলের পানি দ্রুত গতিতে গ্রামে প্রবেশ করে।

বুধবার দুপুরে আবার নিশ্চিন্তপুর গ্রাম এলাকায় মনু নদের প্রতিরক্ষঅ বাঁধে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দেয়। ফলে নছিরগঞ্জ,ইটারঘাট, মনোহরপুর, নিশ্চিন্তপুর, মাদানগর গ্রামের ১ হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েন। সরেজমিন দেখা যায় আমতলা বাজার থেকে ৪ কি:মি: দূরবর্তী চাতলাপুর চেকপোষ্ট পর্যন্ত সড়কের ২টি স্থান ভেঙ্গে নালার সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় চাতলা সেতুর উত্তর দিক ও এ সেতুর সংলগ্ন একটি কালভার্ট ধেবে যায়। এর পর থেকে এ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশে যাতায়াতকারী অনেক যাত্রীকে আটকা পড়তে দেখা যায়।

পানি উন্নঢয়ন বোর্ড জানায়, শরীফপুরে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ৪ টি স্থানের ভাঙ্গনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মনুর চাতলা সেতু এলাকায় বুধবার দুপুরে ১৭৩ সে:মি: বিপদ সীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। সড়ক জনপথ বিভাগের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, মনু নদের চাতলা সেতু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। তার সাথের একটি কালভার্টের এক দিক ধেবে যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন সড়ক জনপথের লোকজন এ দিকে নজরদারী করছে।

এ দিকে মৌলভীবাজারের রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার ধলাই ও মনু নদী ভাঙনে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে প্রায় ৭০টি গ্রাম।

জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার করিমপুর, মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সুরানন্দপুর, বাদে করিমপুর, রহিমপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর, আদমপুর ইউনিয়নের কেওয়ালীঘাট, ঘোড়ামারা, মাধবপুর ইউনিয়নের কাটাবিল, ইসলামপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর নামক স্থানে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরাতন ও নতুন ভাঙ্গন দিয়ে ৬টি ইউনিয়নের করিমপুর, ঘোড়ামারা, বাসুদেবপুর, সুরানন্দপুর, বাদে করিমপুর, বনগাঁও, ধলাইরপার, শ্রীপুর, ঘোড়ামারা, হীরামতি, যুদ্ধাপুর, নাগড়া, গোপালনগর, নাজাতকোনা, কেওয়ালীঘাট, কান্দিগাঁও, হোমেরজানসহ ৩০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানিতে ফসলী জমি তলিয়ে গেছে। এছাড়া ধলাই নদীর মাধবপুর ইউনিয়নের হীরামতি গ্রামের মেরামতকৃত বাঁধ ও কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ এবং রামপাশা গ্রামে খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

অন্যদিকে কুলাউড়া উপজেলার মনু নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।   মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত কুলাউড়ার শরীফপুর ইউনিয়নের বাঘজুর ও তেলিবিল গ্রাম এলাকায়, চাতলাপুর সেতুর উত্তরপাশে ও দুপুরে হাজীপুর ইউনিয়নের মিঞারপাড়া এলাকায় নদীভাঙনের ফলে পানি দ্রুত গতিতে গ্রামে প্রবেশ করে। ফলে ২০টি গ্রামের প্রায় ৪ হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েন। শরীফপুরের বটতলা থেকে চাঁনপুর পর্যন্ত প্রায় ২ কি.মি. সড়ক ৩ ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় এবং কুলাউড়া-শমশেরনগর সড়কে টিলাগাঁও এলাকায় সড়কে পানিতে নিমজ্জিত।

কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জনাব আলী বলেন, মঙ্গলবার শবেকদরের রাত সাড়ে ৮টায় আমলা বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হলে গ্রামবাসী ও বিজিবি সদস্যরা মিলে শতাধিক বস্তা বালু দিয়ে এ স্থান রক্ষা করেন। তবে রাত আড়াইটায় বাঘজুর ও তেলিবিল গ্রাম এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে দ্রুত গতিতে ঢলের পানি গ্রামে প্রবেশ করে। এ পানি বসতঘর সহ ফসরি জমি তলিয়ে নেয়। বাঘজুর, তেলিবিল, চাঁনপুর, খাম্বারঘাট, শরীফপুর, বটতলা, সঞ্জরপুর গ্রামের ২ হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েন।

এ দিকে জেলার রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ২ স্থান দিয়ে মনুনদীর ভাংনের ফলে ২০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং এতে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী বলে নিশ্চিত করেছেন রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি আক্তার।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেদ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, আশা করছেন ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টিপাত বন্ধহলে কাল বা পড়শু থেকে পানি নামা শুরু হবে।

তিনি আরো জানান, সরকারী বরাদ্ধ না থাকার কারনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ করাতে সমস্যা হচ্ছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.