Sylhet Today 24 PRINT

বড়লেখায় পল্লী বিদ্যুৎকর্মীর উদারতা, আক্ষেপ ঘুচল দরিদ্র দম্পতির

তপন কুমার দাস, বড়লেখা |  ১৫ জুন, ২০১৮

আব্দুন নূর (৭৫) ও পিয়ারা বেগম (৬৫) দম্পতির বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ নগর গ্রামে। তাদের কোনো পুত্র সন্তান নেই। তিন কন্যার মধ্যে দুইজনের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়েটিকে নিয়ে মাটির ঘরে তাদের বসবাস।

এক সময় আব্দুর নূরের সংসার চলত দিনমজুরের কাজ করে। কিন্তু বয়সের ভারে এখন কাজের সামর্থটুকু নেই। সংসার চালাতে এখন তাদের অপেক্ষা করতে হয় অন্যের সাহায্যের। গ্রামের মানুষের সাহায্য আর স্ত্রীর ভিক্ষার টাকায় কোনোমতে চলছে সংসার।

তাদের গ্রামের প্রায় সবার ঘরে জ্বলে বিদ্যুতের আলো। কিন্তু যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় এই দম্পতির। সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া তাদের কাছে স্বপ্নের মত। আবেদন করার টাকাটাও নেই। গ্রামের অন্য বাড়িগুলোয় বিদ্যুৎ সংযোগের সময় টাকার কারণে আবেদন করতে পারেননি। আক্ষেপ রয়ে যায় তাদের। কষ্টের এ কথাটি কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারেননি। কুপির আলোই তাদের ভরসা।

তিন-চার মাস আগের কথা। তাদের গ্রামে বিদ্যুৎ লাইন মেরামতের কাজে যান মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা জোনাল অফিসের লাইন ম্যান (গ্রেড-১) মো. রেজাউল করিম। কাজ শেষে ফেরার পথে পিয়ারা বেগম লাইনম্যান রেজাউল করিমকে ডেকে নেন বাড়িতে। বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে তাঁর আক্ষেপ আর কষ্টের কথাগুলো বলেন। কথাগুলো মনে দাগ কাটে রেজাউলের। তিনি বৃদ্ধাকে আশ্বাস দেন। টাকা ছাড়াই তাঁর ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যাবতীয় কাজ করে দেবেন। এর কিছুদিন পর রেজাউল নিজে গিয়ে বৃদ্ধার সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আবেদন জমা দেন। মিটার প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এবার সংযোগ দেওয়ার অপেক্ষা। রেজাউল করিম চিন্তা করেন একটা উৎসবকে সামনে রেখে এই সংযোগটা দেবেন। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সে সুযোগটাও আসে।

সে চিন্তা থেকেই গত বুধবার (১৩ জুন) দুপুরে বিদ্যুতের ক্যাবল, মিটার ও বাল্ব নিয়ে হাজির হন রেজাউল করিম ও তাঁর এক সহকর্মী। এর আগে ঘরে ওয়্যারিং, মিটার বোর্ড বসানো থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করিয়ে রাখেন রেজাউল করিম। সুইচ টেপার সাথে সাথেই বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে পিয়ারা বেগমের বসত ঘর। হাসি ফুটে ওঠে পিয়ার মুখে। পিয়ারার ঘরে সংযোগ দিতে যাবতীয় খরচ বহন করেন রেজাউল করিম।

সরেজমিনে পিয়ারা বেগমের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বাজার ঘাটে মানুষের সাহায্য নিয়েই আমরার সংসার চলে। একদিন এ পুয়ারে (ছেলেরে) পাইয়া কইলাম ও বাবা আমরার ঘরে কারেন্ট নাই রেবা। আমরার কষ্টের কথাগুলো কই (বলি)। তখন এ পুয়ায় কইছন আমি সবতা (সব) নিজের খরচে দিমুনে আপনার কোন টাকা লাগত না (লাগবে না)। কইয়ারে বাবা তিন দিন আইছন আমার বাড়িত কার্ড নিতা করি। আল্লায় তানোর ভালা করতা। যে কষ্ট করছইন এ বেটায় আমরার লাগি। আগে মিটারের টেকা (টাকা) আর ওয়্যারিংয়ের টাকা দিতে না পারায় কারেন্ট পাইনি। মুখ দিয়া কইছি আর বেটায় কারেন্ট দিছইন। ঈদের মাঝে কারেন্ট জ্বলব। অনেক খুশি লাগের বাবা।’

মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ওই এলাকায় কাজে গিয়েছিলাম। তখন তিনি (পিয়ারা বেগম) বলছিলেন বাবা আমি তো ভিক্ষা করে খাই। কারেন্ট দিতে পারবে কি না। খুব করুণ সুরে বলেছিলেন। তাদের কষ্টের কথাগুলো আমার হৃদয় স্পর্শ করে। খুবই গরিব উনারা। সবাই কারেন্ট জ্বালায়। তাদের আগ্রহ বিদ্যুৎ পাওয়ার। সকল খরচ বহন করে ঈদকে সামনে রেখে এ সংযোগটা দিয়ে দিলাম।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.